Tag: হজ

  • হজ পালনে সৌদি সরকারের ৪ শর্ত

    হজ পালনে সৌদি সরকারের ৪ শর্ত

    এবার পবিত্র হজ পালনে চারটি শর্ত দিয়েছে সৌদি আরব। শর্তগুলো জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে দেশটি। গতকাল সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) শর্তগুলো প্রকাশ করেছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

    সৌদি আরবের দেওয়া শর্তগুলো

    করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯), মেনিনজাইটিস এবং সিজনাল ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা দিতে হবে, যারা হজ করেননি এবারের হজে তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া, হজে পালনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ১২ বছর, হজযাত্রীর কোনো বড় দীর্ঘস্থায়ী রোগ থাকা যাবে না।

    চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৭ জুন (৯ জিলহ্জ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। সৌদি আরবের সঙ্গে হজচুক্তি অনুযায়ী, এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার ও অবশিষ্ট এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ করার সুযোগ পাবেন।

    ২০২৩ সালে সরকারি ও বেসরকারিভাবে হজে যেতে নিবন্ধন শুরু হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। নিবন্ধন শেষ হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি।

  • ৩০ শতাংশ কমেছে হজের খরচ

    ৩০ শতাংশ কমেছে হজের খরচ

    গত বছরের তুলনায় এবার সৌদি আরবে গিয়ে হজ করার খরচ কমেছে ৩০ শতাংশ। সৌদি কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য দিয়েছে। দেশটির হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশের বেশি ইকোনোমিক হজ প্যাকেজ বিক্রি হয়েছে।

    স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে যে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ডা. আমর বিন রেদা আল মাদ্দার মতে, এ বছর হজ পালনের খরচ গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এবার হজ প্যাকেজের খরচ কমেছে।’

    আল মাদ্দাহ বলেন, হজ পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট দেশীয় বিভাগগুলোকে ভাগ করা হয়েছে। কতজন হজে আসবেন তা ক্যাম্পে দেওয়া পরিষেবার ধরন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

    গত সপ্তাহের শুরুতে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটিতে হজযাত্রীদেরকে তাদের হজ প্যাকেজের জন্য সম্পূর্ণ অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করার পরিবর্তে তিনটি কিস্তিতে পরিশোধ করার বিকল্প রয়েছে। আগের নিয়মেই এ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।

    নিজেদের স্থান সংরক্ষিত করার জন্য সম্ভাব্য হজযাত্রীদের অবশ্যই নিবন্ধনের ৭২ ঘন্টার মধ্যে মোট খরচের ২০ শতাংশের আংশিক অর্থ প্রদান করতে হবে। ৪০ শতাংশের দ্বিতীয় কিস্তি ৭/৭/১৪৪৪ হিজরি তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ খরচ অবশ্যই ১০/১০/১৪৪৪ হিজরি তারিখের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
    প্রতিটি অর্থপ্রদানের জন্য একটি পৃথক চালান থাকবে। সময়মত অর্থ প্রদান করা হলে হজ করায় কোনো বাধা থাকবে না। সঠিকভাবে সম্পূর্ণ অর্থ না দিলে হজ করতে দেওয়া হবে না।

    করোনার কারণে তিন বছরের জন্য বার্ষিক এ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আকার হ্রাস করা হয়েছিল। পরে সৌদি আরব হজযাত্রার ওপর আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

    সরকারি গণমাধ্যম সৌদি প্রেস এজেন্সির প্রতিবেদন অনুসারে জানা গেছে যে দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল রাবিয়াহ বলেছেন, ‘এবার আগের মতো লাখ লাখ হজযাত্রী সৌদিতে আসবেন। কারণ, এবার হজ করার বিষয়ে আগের মতো করোনা বিধি-নিষেধ ও বয়সের সীমারেখা নেই।

    উল্লেখ্য, করোনা মহামারির আগে প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান হজ পালনের জন্য পবিত্র শহর মক্কায় সমবেত হতেন।

  • বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন

    বাংলাদেশ থেকে এ বছর হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন

    চলতি বছরে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান জানিয়েছেন।

    আজ রোববার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান।

    সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের হজযাত্রীর কোটা ছিল ৫৮ হাজার ৬২৮ জন। ২০১৯ সালে তা ১ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ জনে বৃদ্ধি পেয়েছিল।

    কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে ২০২২ সালে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশকে সীমিত পরিসরে ৬০ হাজার ১৪৬ জন হজযাত্রীর কোটা দেওয়া হয়েছিল।

    ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত হজযাত্রীর কোটা ১৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

    এটা বর্তমান সরকারের সাফল্যের একটি বড় মাইলফলক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

  • হজ সম্পাদনের পূর্ণাঙ্গ সহায়িকা

    হজ সম্পাদনের পূর্ণাঙ্গ সহায়িকা

    হজ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির অন্যতম। পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে-‘আল্লাহর পক্ষ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখেন।’ এ বছর প্রায় ৫৭ হাজার ৫৮৫ বাংলাদেশি পবিত্র হজে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী ৮ জুলাই শুরু হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মরহুম আলহাজ শেখ গোলাম মুহীউদ্দীন (রহ.) রচিত ‘কিতাবুল হজ্জ’ অবলম্বনে হজের মাসয়ালা-মাসায়িল ও বিধিবিধান নিয়ে বিস্তারিত লিখেছেন-মাওলানা তোফায়েল গাজালি

    তালবিয়া

    ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা, লাকা ওয়াল্ মুল্ক, লা-শারিকা লাক।’ অর্থ : আমি হাজির, হে আল্লাহ্! আমি হাজির, আমি হাজির, কোনো শরিক নেই তোমার, আমি হাজির, নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও নিয়ামত তোমারই, আর সব সাম্রাজ্যও তোমার, কোনো শরিক নেই তোমার।

    হজের ফজিলত

    আল্লাহতায়ালা বলেন, নিশ্চয় মানবজাতির জন্য প্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা তো বাক্কায় (মক্কায়) অবস্থিত, তা বরকতময় ও বিশ্বজগতের দিশারী। তাতে অনেক সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, যেমন মাকামে ইবরাহিম। আর যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ করা তার অবশ্যই কর্তব্য। এবং কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ্ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন। (সূরা আলে-ইমরান আয়াত : ৯৬-৯৭)।

    হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রাসূল (সা.)কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘কোন আমল সবচেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ইমান। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোন কাজটি সবচেয়ে উত্তম? তিনি বললেন, ‘হজে মাবরুর’ অর্থাৎ ত্রুটিমুক্ত হজ। (বুখারি ও মুসলিম)।

    প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র

    ১. দুই সেট ইহরামের কাপড় সঙ্গে রাখুন

    ২. নরমাল স্যান্ডেল নিন

    (ইহরাম অবস্থায় পরার জন্য)

    ৩. কাঁধে ঝুলিয়ে রাখার ব্যাগ

    ৪. লুঙ্গি, পায়জামা, পাঞ্জাবি প্রয়োজন মতো

    ৫. গেঞ্জি, টুপি, রুমাল ও জুতা প্রয়োজন মতো

    ৬. গামছা বা তোয়ালে ও ফোল্ডিং ছাতা

    ৭. টুথপেস্ট, ব্রাস, মিসওয়াক, নোট বই ও কলম

    ৮. মহিলাদের আবশ্যকীয় অন্যান্য জিনিসপত্র ৯. জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।

    ১০. লাগেজ বা সুটকেস।

    ইহরাম

    তালবিয়া পাঠসহ হজ-উমরাহর নিয়ত করাকে ইহরাম বলা হয়। বাংলাদেশি হাজিদের মিকাত বা ইহারম বাঁধার নির্ধারিত স্থান হলো ‘ইয়ালামলাম’। যারা প্রথমে মক্কা শরিফ যাওয়ার ইচ্ছা নিয়ে রওনা হচ্ছেন, তাদের বিমানে আরোহণের আগেই ইহরাম বেঁধে নেওয়া ভালো। কারণ বিমান এ স্থানটি কখন অতিক্রম করে তা আপনার জন্য অনুধাবন করা কঠিন হতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, উমরাহ বা হজ আদায়কারীকে অবশ্যই জেদ্দা পৌঁছার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে। তবে যারা মদিনা শরিফে প্রথমে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, তারা ইহরাম ছাড়া রওনা হবেন এবং জেদ্দা পৌঁছে সরাসরি মদিনা শরিফে চলে যাবেন। মদিনা শরিফ থেকে মক্কা শরিফে আসার পথে জুল-হুলাইফা (বর্তমান ‘বীরে আলী’ নামে পরিচিত) থেকে ইহরাম বেঁধে মক্কা শরিফে পৌঁছবেন।

    মনে রাখতে হবে, ইহরাম বাঁধার সময় লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে আপনি কোন ধরনের হজ করবেন। হজে তামাত্তু, নাকি কিরান নাকি ইফরাদ? বাংলাদেশ থেকে যারা যান, তারা সাধারণত তামাত্তু তথা প্রথমে ওমরাহ, তারপর হজ করেন। আপনিও যদি হজে তামাত্তু করতে চান, তাহলে আপনাকে ইহরাম বাঁধতে হবে ওমরাহর। মক্কায় পৌঁছে ওমরাহ পালন শেষে ৮ জিলহজ হারাম শরিফ থেকে ফের যে ইহরাম করবেন-সেটি হবে আপনার হজের ইহরাম।

    পুরুষের ইহরাম

    ১. ইহরাম বাঁধার আগে গোঁফ, চুল, নখ, ইত্যাদি কেটে যথারীতি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে সাবান দিয়ে খুব ভালোভাবে গোসল করে আতর-সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি হয়ে থাকা উচিত। ২. ইহরাম বাঁধার সময় ইহরামের নিয়তে গোসল করা সুন্নাত। অসুবিধা থাকলে ওজু করলেও চলবে। ৩. সেলাই করা কাপড় খুলে একটা সাদা চাদর নাভির ওপর থেকে লুঙ্গির মতো পরে নিন। আর একখানা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিন। যেন দুই কাঁধ ও পিঠ ঢাকা থাকে। ইহরামের লেবাস সাদা এবং নতুন হওয়া ভালো। ৪. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) উচ্চস্বরে পড়ুন। যদি কেউ পড়তে না পারেন তবে অন্য কেউ তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন। ৫. দুই ফিতার স্যান্ডেল ব্যবহার করুন যেন পায়ের ওপরের মাঝখানের উঁচু হাড় এবং গোড়ালি খোলা থাকে।

    মহিলার ইহরাম

    ১. মহিলাদের জন্য ইহরামের কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই। মহিলারা সেলাইযুক্ত ওইসব কাপড়-চোপড় পরিধান করবেন, যেগুলো তারা স্বাভাবিকভাবে পরিধান করেন। যেমন : শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, ম্যাক্সি, বোরখা ইত্যাদি। যে কোনো ধরনের আরামদায়ক জুতাও ব্যবহার করতে পারবেন। ২. ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করে নিন। গোসল করতে অসুবিধা থাকলে শুধু ওজু করে নিন। চিরুনি দিয়ে খুব ভালোভাবে চুল আছড়িয়ে নিন। ৩. এই গোসল শুধু পরিচ্ছন্নতার জন্য। এ কারণে ঋতুবতী মহিলা এবং শিশুদের জন্যও তা সুন্নাত। এর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা শরিয়তসিদ্ধ নয়। ৪. যদি মাকরুহ ওয়াক্ত না হয়, তবে ইহরামের নিয়তে সাধারণ নফল নামাজের মতো দুরাকাত নফল নামাজ পড়ুন। আর যদি মাকরুহ ওয়াক্ত হয় তবে ওই দুরাকাত নফল নামাজ ছাড়াই ইহরামের নিয়ত করুন। ৫. নিয়তের সঙ্গে সঙ্গে তিনবার তালবিয়া (লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…) নিুস্বরে পড়ুন। যদি কোনো মহিলা পড়তে না পারেন তবে অন্য কোনো মহিলা তাকে পড়িয়ে দিন। তারপর দরুদ শরিফ পড়ুন এবং মোনাজাত করুন।

    ইহরাম অবস্থায় যে কাজগুলো নিষিদ্ধ

    ১. সেলাইযুক্ত কাপড় যেমন কোর্তা, পায়জামা, টুপি, গেঞ্জি, মোজা ইত্যাদি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। কিন্তু মহিলারা সেলাইযুক্ত স্বাভাবিক কাপড় পরিধান করবেন। ২. পুরুষের জন্য মাথা ও মুখমণ্ডল আবৃত করা নিষিদ্ধ, জাগ্রত বা ঘুমন্ত উভয় অবস্থায় খোলা রাখতে হবে। ৩. যে কোনো ধরনের সুগন্ধি, আতর, সুগন্ধি তেল বা সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ৪. ক্ষৌরকার্য করা যেমন : চুল, দাড়ি, গোঁফ ইত্যাদি কামানো বা নখ কাটা বা ছিঁড়ে ফেলা নিষিদ্ধ। ৫. বন্য পশুপাখি শিকার করা বা কাউকে শিকারে কোনোরূপ সাহায্য-সহযোগিতা করা নিষিদ্ধ। ৬. এমন জুতা পরিধান করা নিষিদ্ধ যার ফলে পায়ের ওপরের মাঝখানে উঁচু হাড় ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ নয়। ৭. স্বামী-স্ত্রী দৈহিক সম্পর্ক, এমনকি ওই সম্পর্কে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। ৮. ঝগড়া-বিবাদ করা, অশ্লীল কথাবার্তা বলা এমনিতেও নিষিদ্ধ, ইহরামের অবস্থায় আরও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    তাওয়াফ

    হজের উদ্দেশে কাবা শরিফের চতুর্দিকে ঘোরাকে তাওয়াফ বলা হয়। তাওয়াফের ওয়াজিবগুলো : ১. তাহারাত অর্থাৎ গোসল ফরজ থাকলে তা করে নেওয়া এবং ওজু না থাকলে ওজু করে নেওয়া (২) শরীর ঢাকা (৩) কোনো কিছুতে আরোহণ না করে তাওয়াফ করা (মাযুর অর্থাৎ বৃদ্ধ, অসুস্থ ও রুগ্ণ অক্ষম ব্যক্তির জন্য অবশ্য আরোহণ করে তাওয়াফ করা জায়েজ) (৪) ডান দিক থেকে তাওয়াফ করা (৫) হাতিমসহ (বাইতুল্লাহর উত্তর দিকে বাইতুল্লাহ সংলগ্ন অর্ধচক্রাকৃতি দেওয়াল ঘেরা জায়গা) তাওয়াফ করা (৬) সবকটি চক্কর পূর্ণ করা (৭) তাওয়াফের শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া। তাওয়াফের সুন্নাতগুলো : (১) হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করা (২) ইজতিবা করা (অর্থাৎ ইহরামের চাদর ডান বগলের নিচ দিয়ে এনে বাম কাঁধে জড়ানো) (৩) হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান করা বা হাতে ইশারা করে তাতে চুমু দেওয়া (৪) প্রথম তিন চক্করে রমল করা (অর্থাৎ বীরদর্পে হাত দুলিয়ে দ্রুত পায়ে চলা) (৫) বাকি চক্করগুলোতে রমল না করা (৬) সায়ী ও তাওয়াফের মাঝে ইস্তিলাম (হাজরে আসওয়াদে চুমু প্রদান বা হাত কিংবা ছড়ি দিয়ে ইশারা করে তাতে চুমু প্রদান করা (৭) হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠানো (৮) তাওয়াফের শুরুতে হাজরে আসওয়াদের দিকে মুখ করা (৯) চক্করগুলো বিরতি না দিয়ে পরপর করা।

    সায়ী

    সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে দৌড়ানোকে ‘সায়ী’ বলে। বর্তমানে এ স্থানটুকুর কিছু অংশ সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত আছে। সেখানে এসে দ্রুত দৌড়াতে হয়। সায়ী করা ওয়াজিব এবং তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই এটা করা সুন্নাত। সায়ীর ওয়াজিবগুলো : (১) পায়ে চলে সায়ী করা (২) সাত চক্কর পূর্ণ করা (৩) সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণভাবে অতিক্রম করা। সায়ীর সুন্নাতগুলো : (১) হাজরে আসওয়াদে চুমু দিয়ে সায়ীর জন্য বের হওয়া (২) তাওয়াফ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সায়ী করা (৩) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করা (৪) সাফা ও মারওয়ায় আরোহণ করে কেবলামুখী হওয়া (৫) সায়ীর চক্করগুলো একটির পর একটি আদায় করা (৬) সবুজ স্তম্ভ দুটির মধ্যবর্তী স্থানটি একটু দৌড়ে অতিক্রম করা।

    ওমরাহ

    নিয়ত : ‘হে আল্লাহ! আমি উমরাহ পালন করার নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দিন ও কবুল করুন।

    ওমরাহর ফরজ দুটি। যথা-১. ইহরাম বাঁধা। ২. তাওয়াফ করা। ওমরাহর ওয়াজিব দুটি। যথা-১. সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানে সাতবার সায়ী করা। ২. মাথার চুল মুণ্ডন করা।

    হজ তিন প্রকার

    হজে তামাত্তু : হজের মাসগুলোয় উমরাহর ইহরাম বেঁধে প্রথমে উমরাহ পালন করে ইহরাম খুলে ফেলা, অতঃপর হজের জন্য আবার ইহরাম বেঁধে হজ সমাপন করাকে ‘তামাত্তু হজ’ বলে। তামাত্তু হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা ওয়াজিব।

    হজে কিরান : হজের মাসগুলোয় উমরাহ ও হজ একসঙ্গে উভয়টির ইহরাম বেঁধে প্রথমে উমরাহ পালন করে ইহরাম না খুলে ওই একই ইহরামে হজ সমাপন করাকে ‘হজে কিরান’ বলে। কিরান হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা ওয়াজিব।

    হজে ইফরাদ : হজের মাসগুলোয় শুধু হজের ইহরাম বেঁধে হজ সমাপন করাকে ‘হজে ইফরাদ’ বলে। এতে কোনো উমরাহ পালন করা হয় না। ইফরাদ হজে দমে শোকর বা হজের শোকরিয়া স্বরূপ কুরবানি করা মুস্তাহাব।

    ফকিহদের মতে, এই তিন ধরনের হজের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে হজে কিরান, তারপর হজে তামাত্তু, তারপর হজে ইফরাদ।

    হজের ফরজ

    ১. ইহরাম বাঁধা। ২. আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা অর্থাৎ ৯ জিলহজের সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে কোনো সময় এক মুহূর্তের জন্য হলেও আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা। ৩. তাওয়াফে জিয়ারত করা অর্থাৎ ১০ জিলহজের ভোর থেকে ১২ জিলহজের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বাইতুল্লাহ শরিফের তাওয়াফ করা।

    হজের ওয়াজিব

    (১) নির্দিষ্ট জায়গা থেকে ইহরাম বাঁধা (২) সায়ী অর্থাৎ সাফা ও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানো। (৩) সাফা থেকে সায়ী শুরু করা। (৪) তাওয়াফের পর সায়ী করা (৫) সূর্যাস্ত পর্যন্ত উকুফে আরাফা করা। (৬) মুজদালিফায় উকুফ বা অবস্থান করা। (৭) মাগরিব এবং এশার নামাজ মুজদালিফায় এসে একত্রে এশার সময় পড়া। (৮) দশ তারিখ শুধু জামরাতুল আকাবায় এবং ১১ ও ১২ তারিখে তিন জামরায় রামি-পাথর নিক্ষেপ করা। (৯) জামরাতুল আকবার ‘রামি’ বা পাথর নিক্ষেপ দশ তারিখে হলক অর্থাৎ মস্তক মুণ্ডনের আগে করা (১০) কুরবানির পর মাথা কামানো কিংবা চুল ছাঁটা (১১) কিরান এবং তামাত্তু হজ পালনকারীর জন্য কুরবানি করা (১২) তাওয়াফ হাতিমের বাইরে দিয়ে করা (১৩) তাওয়াফ ডান দিক থেকে করা (১৪) কঠিন অসুবিধা না থাকলে হেঁটে তাওয়াফ করা (১৫) ওজুর সঙ্গে তাওয়াফ করা (১৬) তাওয়াফের পর দুরাকাত নামাজ পড়া (১৭) তাওয়াফের সময় সতর ঢাকা থাকা (১৮) পাথর নিক্ষেপ করা ও কুরবানি করা, মাথা মুণ্ডানো এবং তাওয়াফ করার মধ্যে তারতিব বা ক্রম বজায় রাখা (১৯) মিকাতের বাইরে অবস্থানকারীদের বিদায়ী তাওয়াফ করা (২০) ইহরামের নিষিদ্ধ কাজগুলো না করা।

  • আজ পবিত্র হজ

    আজ পবিত্র হজ

    লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শরীকা লাকা লাব্বাইক।’ হাজারো ধর্মপ্রাণ মুসল্লির কণ্ঠে এ ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে আরাফাত ময়দান।

    করোনাকালে দ্বিতীয় বছরের মতো সীমিত পরিসরে হজ পালিত হচ্ছে। অবশ্য গত বছরের চেয়ে এবারে শর্তসাপেক্ষে বেশি সংখ্যক মানুষজনকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের হজ করতে ইচ্ছুক এমন সাড়ে ৫ লাখেরও বেশি আবেদন অনলাইনে জমা পড়ে। সেখান থেকে লটারির মাধ্যমে ১৫০ দেশের মাত্র ৬০ হাজার মানুষ এবারে হজ করার অনুমতি পেয়েছেন। তবে শর্ত থাকে যে করোনার দুই ডোজ টিকা নেওয়া থাকতে হবে।

    গত শনিবার (১৭ জুলাই) থেকে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতবারের মতো এবারও করোনার মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজ পালন করা হচ্ছে।

    সোমবার (১৯ জুলাই) সকালে মিনা থেকে ৩ হাজার বাসে করে হজযাত্রীদের আরাফার ময়দানে সুশৃঙ্খলভাবে পৌঁছানো হয়েছে। হজযাত্রীরা আরাফার ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করে আল্লাহর কাছে মোনাজাতের মাধ্যমে জীবনের সব গুনাহ মাফ করার জন্য প্রার্থনা করবেন।

    হাজিরা মসজিদে নামিরা থেকে দেওয়া হজের খুতবা শ্রবণ, যোহর, আসরের এক আজানের দুই ইকামতে কসরের সঙ্গে আদায় করবেন। তাঁবুতে অবস্থানকারী হাজিরা তাঁবুতে নামাজ আদায় করবেন।

    আরাফাত ময়দান থেকে সূর্য অস্ত যাবার পর হাজীরা রওনা দেবেন মুজদালিফার উদ্দেশে। মুজদালিফায় পৌঁছে তারা মাগরিব ও এশা একসঙ্গে আদায় করবেন।

    মুজদালিফার খোলা ময়দানে রাত্রি যাপন করবেন। শয়তানকে নিক্ষেপ করার জন্য সৌদি সরকার পক্ষ থেকে জীবাণুমুক্ত কংকর প্রত্যেক হজযাত্রীকে সরবরাহ করা হবে। এজন্য হাজীদের নিজ উদ্যোগে মুজদালিফা ময়দান থেকে কংকর সংগ্রহ করতে হবে না। ময়দান থেকে আগামীকাল ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয়ের পর মিনা পৌঁছে হাজিরা প্রথম দিন বড় জামারায় সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন, পাশাপাশি পশু কোরবানি দিয়ে মাথা মুণ্ডন করে ঈদ আনন্দে মেতে উঠবেন।

    হাজিরা মিনা-ময়দানে এভাবে তিন দিন অবস্থান করে পর্যায়ক্রমে শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করবেন।

  • এবার হজে পবিত্র কাবা শরীফ স্পর্শ করা যাবে না

    এবার হজে পবিত্র কাবা শরীফ স্পর্শ করা যাবে না

    করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। এই পরিস্থিতিতে অসহায় হয়ে পড়েছে বিশ্বের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা।

    অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও হানা দিয়েছে এই ভাইরাস। এর বিষাক্ত ছোবলে ইতোমধ্যে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৫ শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯১৬ জনের।

    করোনার এই পরিস্থিতিতে এবারের হজ বাতিলের শঙ্কা জেগেছিল। শেষ পর্যন্ত হজ হচ্ছে, তবে সৌদি আরবের বাইরের কেউ হজ করতে পারবেন না। প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বেড়ে যাওয়ার পর হজের জন্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার।

    সোমবার (৬ জুলাই) রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, এবারের হজ পালনের সময় কাবা শরীফ স্পর্শ করতে পারবেন না হাজীরা। এছাড়া সব ধরনের সমাবেশ ও সভা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

    ইসলামের পবিত্র নির্দশন কাবা স্পর্শ করা যাবে না এবারের হজে। নামাজের সময় তো বটেই, কাবা শরীফ তাওয়াফের সময়ও দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে হাজীদের মধ্যে। রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানায়।

    সীমিত সংখ্যক হাজী মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে যাওয়ার অনুমতি পাবেন। ১৯ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এবারের হজ, এই সময়ে হাজী ও আয়োজকদের প্রত্যেকের জন্য সর্বদা মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

    এবারের হজে হাজীরা কী করতে পারবেন আর পারবেন না

    সৌদি আরবের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে এই বছরের সীমিত আকারের হজে কিছু নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কাবা ঘর ও হজরে আসওয়াদ ছুঁতে পারবেন না যারা হজ করবেন।

    পাথর নিক্ষেপের যে রীতি আছে সেখানে বিশেষ ধরনের পাথর ব্যবহার করতে হবে। হজের বিশেষ অনুমতি ছাড়া ১৯শে জুলাই থেকে হজের পঞ্চম দিনের আনুষ্ঠানিকতা পর্যন্ত কেউই মিনা, মুজদালিফাহ ও আরাফাতে যেতে পারবেন না।

    যদি কারো মধ্যে উপসর্গ দেখা যায় তবে তার হজের বাকি আনুষ্ঠানিকতা নির্ভর করবে চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণের ওপর। হাজিদের জন্য আলাদা ভবন, পরিবহন ব্যবস্থা রাখা হবে। উপসর্গ যদি বেশি হয় তাহলে হজে অংশ নিতে দেয়া হবে না।

    সকল হাজিদের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হবে। মক্কার এই সুবিশাল মসজিদের সকল ফ্রিজ সরিয়ে নেয়া হবে, যার যার ব্যক্তিগত পানির পাত্রে পানি নিয়ে পান করতে হবে।

    আলাদা খাবারের ব্যবস্তা থাকবে। যে তাবুর নিচে হাজিরা অবস্থান করেন সেখানে প্রতি ৫০ বর্গমিটারে ১০ জনের বেশি থাকা যাবে না।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর

  • সীমিত পরিসরে হজ;কোনো দেশ থেকেই হজে যেতে পারবেন না কেউ

    সীমিত পরিসরে হজ;কোনো দেশ থেকেই হজে যেতে পারবেন না কেউ

    বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে ‘সীমিত পরিসরে’ হজ পালনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব সরকার।

    ঘোষণা অনুযায়ী, সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে সীমিতসংখ্যক ব্যক্তি এবার হজে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ এবার কোনো দেশ থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা হজে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।

    এ ঘোষণা অনুযায়ী, এবার হজে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশে থেকে যারা নিবন্ধন করেছিলেন, তারাও কেউ হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যেতে পারবেন না।

    একইভাবে অন্য কোনো মুসলিম দেশের কোনো নাগরিকও হজ পালনের জন্য যেতে পারবেন না।

    সোমবার (২২ জুন) সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে।

    বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যেসব নাগরিক বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, কেবল তাদের মধ্য থেকেই কেউ কেউ এবার হজ পালনের সুযোগ পাবেন। ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারি চলতে থাকায় এবং বিশাল জনসমাগমের মধ্যে করোনার বিস্তার ঘটার ঝুঁকি থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

    এ বছর হজ পালনে সৌদি আরব যেতে বাংলাদেশের ৬৫ হাজার ৫১২ জন মুসল্লি নিবন্ধন শেষ করেছিলেন। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না আসায় বাংলাদেশের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকেও হজ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য জানানো হয়নি। সৌদি আরব সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণার ওপরই নির্ভর করেই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে— এমনটিই ধারণা দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা।

    সৌদি সরকারের আজকের ঘোষণা অনুযায়ী এটা নিশ্চিত হয়ে গেল, অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ থেকে হজ করতে আগ্রহীরাও এ বছর হজ পালনের সুযোগ পাবেন না।

    বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যাও হাজার ছাড়িয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব যেন বাড়তে না পারে, সেজন্য মার্চের শুরুতে বিদেশি নাগরিকদের জন্য মক্কা ও মদিনায় ওমরাহ পালন ও ধর্মীয় সব আয়োজন বন্ধের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও বাতিল করে দেওয়া হয়। এত উদ্যোগের পরেও সংক্রমণ বেড়েই চলেছে।

    সোমবার দিবাগত রাতের তথ্য বলছে, দেশটিতে এক লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এক হাজার ৩০৭ জন।

    করোনাভাইরাসের অব্যাহত সংক্রমণের মুখে হজ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয় শুরু থেকেই। এ পরিস্থিতিতে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া এবার তাদের নাগরিকদের প্রতি হজ পালনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। অন্য মুসলিম দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা না দিলেও এবার সৌদি আরবই জানাচ্ছে, তারা কাউকে হজ পালনের জন্য সৌদি আরব আসতে অনুমোদন দেবে না।

    জানা যায়, প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ২৫ লাখ মুসলমান সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে যান।

    ২৪ ঘণ্টা/এম আর

  • ২২২ বছর পর প্রথম বাতিল হতে পারে হজ

    ২২২ বছর পর প্রথম বাতিল হতে পারে হজ

    মহামারি আকার ধারণ করা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপে সারা বিশ্ব অবরুদ্ধ হয়ে আছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদি আরবেও করোনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ইতিমধ্যেই দেশটির পবিত্র দুই নগরীতে মক্কা-মদিনাতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি করা হয়েছে। পুরো দেশে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন।

    এমন অবস্থায় মুসলিমদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় জমায়েত পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে কি-না সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

    করোনাভাইরাসের বর্তমান ভয়াবহতা অব্যাহত থাকলে ২২২ বছর পর এবার প্রথম বাতিল হতে পারে হজ।

    সর্বশেষ ১৭৯৮ সালে বাতিল হয়েছিল হজের আনুষ্ঠানিকতা। এ ছাড়া মহামারি ও যুদ্ধের কারণে আরও প্রায় ৪০ বার এই বার্ষিক জমায়েত বাতিল হয়েছে।

    করোনাভাইরাসের কারণে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সৌদি আরবের পক্ষ থেকে হজ নিয়ে এখনই কাউকে চুক্তি না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সৌদি আরবের কর্মকর্তাদের দেওয়া ইঙ্গিত পর্যালোচনা করে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাতিল হতে পারে এ বছরের হজ।

    জুলাই মাসের শেষের দিকে শুরু হওয়ার কথা এ বছরের হজের আনুষ্ঠানিকতা। তবে হজের নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম এখনও বন্ধ রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলিমদের হজে অংশগ্রহণের বিষয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

    এদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের পুরো দেশে ঘোষণা করা হয়েছে লকডাউন। দেশটির পবিত্র দুই নগরী মক্কা ও মদিনাতে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা হজযাত্রার কেন্দ্রবিন্দু।

    ১৯১৮ সালের স্প্যানিশ ফ্লু মহামারির সময়ও এই দুটি শহর বন্ধ করা হয়নি।

    লন্ডনের কিংস কলেজের ওয়ার স্টাডিজের লেকচারার সিরাজ মাহের বলেন, ‘সৌদি কর্তৃপক্ষ মানুষকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করছে যে এবারের হজ বাতিল হতে পারে।’

    অতীতের ঐতিহাসিক উদাহরণ উল্লেখ করে সিরাজ মাহের বলেন, ‘বিপর্যয় বা সংঘাতসহ বিভিন্ন কারণে হজ বাতিল করা হয়েছিল। আমার মনে হয়, এটি সেই বৃহত্তর প্রচেষ্টা যাতে মানুষকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে, হজ যদি বাতিল করা হয়েই থাকে তাহলে তা একেবারেই কোনো অভূতপূর্ব ঘটনা নয়।’

    সিরাজ মাহের জানান, ইসলামে কেয়ামতের ইঙ্গিতের যে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে সেখানে বলা হয়েছে হজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে হজ বাতিল হলে তা কেয়ামত নিকটে আসার ইঙ্গিত বহন করবে।

    আবার কেউ কেউ বলছেন, তা যথাযথ নয়। কারণ কেয়ামতের ইঙ্গিত দিতে গিয়ে হজের ব্যাপারে মানুষের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছে, মহামারির কারণে হজ বাতিল তো আলাদা ব্যাপার।

    সিরাজ মাহেরের দাবি, ভবিষ্যদ্বাণী কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন তার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করবে।

    এদিকে, সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রী মুহাম্মদ সালেহ বিন তাহের বান্তেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘সৌদি আরব সমস্ত মুসলিম ও নাগরিকের সুরক্ষার জন্য প্রস্তুত। এ কারণেই আমরা পরিষ্কার ধারণা না পাওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে হজের বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্বের সমস্ত মুসলিমদের কাছে এই মুহূর্তে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার জন্য অনুরোধ করেছি।’

  • হজ কোটা বৃদ্ধি, এবার হজপালন করবেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন

    হজ কোটা বৃদ্ধি, এবার হজপালন করবেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন

    আগামী বছর বাংলাদেশি হজযাত্রীদের জন্য ১০ হাজার হজ কোটা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে হজপালন করার সুযোগ পাবেন ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯১ জন।

    বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সকালে মক্কায় ২০২০ সালের হজ চুক্তির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন সৌদি আরবের হজ ও উমরা প্রতিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুল ফাত্তাহ বিন সোলায়মান মাশাতের নেতৃত্বে সৌদি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

    বৈঠক শেষে হজ কোটা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হজ এজেন্সিজ এসোসিয়েশন আব বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাৎ হোসাইন তাসলিম।

    উল্লেখ্য যে, মুসলিম জনসংখ্যার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের অনুকূলে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ হজ কোটা বরাদ্দ দেয়। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজপালনের সুযোগ পেয়ে আসছেন। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অনুকূলে হজ কোটা বাড়ানোর জন্য বলা হচ্ছিল। বাংলাদেশের দাবি মেনে এবার ১০ হাজার কোটা বাড়ানো হলো।

    চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২০ সালে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ১ আগস্ট। বাংলাদেশ থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে ২৫ জুন।