চবি প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক সমিতির আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা অংশগ্রহণ না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় পূর্ণ প্যানেলে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন আওয়ামীপন্থী হলুদ দল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী গতকাল রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল মনোনয়ন নেয়া এবং জমা দেয়ার শেষ তারিখ। এতে হলুদ দল থেকে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দল ও সাদা দল থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম থেকে কেউই মনোনয়ন জমা দেননি।
ফলে অন্য কোন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় অষ্টমবারের মতো নিশ্চিত বিজয়ের অপেক্ষায় রয়েছে হলুদ দল। আগামী বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) তাদের নির্বাচিত ঘোষনা করা হতে পারে।
বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের নির্বাচন বর্জনের কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক ও বন ও পরিবেশ বিদ্যা ইনিস্টিটিউটের প্রফেসর ড. আমিন বলেন, এ যাবৎ আমরা সব সময় নির্বাচন করে আসছি। এবার আমরা প্রতীকি প্রতিবাদ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। সারা দেশে ভোটাধিকারের অবস্থা আপনারা জানেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও মনে হচ্ছে না শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। মনে হচ্ছে দলীয় বিবেচনায় ভোটার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
শিক্ষকরা তাদের পছন্দ মতো প্রার্থীদের ভোট দিতে বিব্রতবোধ করছে। এরকম ভাবে তো একটা বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। এটারই একটা প্রতিবাদ, আগামীতে যেন মেধা ও মননের ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়।
সাদা দলের আহ্বায়ক ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর এম আতিকুর রহমান বলেন, আমরা সব সময় নির্বাচন করে আসছি এবং বিভিন্ন পরিষদে জয় লাভও করেছি। বর্তমান ভিসি ম্যামের আগে দ্বায়িত্ব পালন করা দু’জন ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়ণ কর্মকাণ্ড, সভা, সমাবর্তন, অনুষ্ঠান নিয়ে গঠিত কমিটি, হল প্রভোস্ট, আবাসিক শিক্ষক নিয়োগে সাদা দলের সাথে বৈষম্য করেছেন।
তিনি আরও বলেন, অতীতে এসব কমিটি একতরফা দলীয় বিবেচনায় করা হয়নি। এতে সাদা দলের শিক্ষকরাও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে সব পরিষদে সবার সমান অধিকার। এসব কারনে শিক্ষকদের ক্ষোভ রয়েছে। যার কারনে এবার আমরা নির্বাচনে অংশ নিইনি।
তবে ভরাডুবির আশংকায় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আসছেন না বলে জানিয়েছেন হলুদ দলের স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর ড. সুলতান আহমেদ।
হলুদ দলের প্রার্থী যারা : হলুদ দল থেকে সভাপতি পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মো. এমদাদুল হক, সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রফেসর মো. তৌহিদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাইফুদ্দীন, কোষাধ্যক্ষ পদে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহ নেওয়াজ মাহমুদ, সদস্য পদে বন ও পরিবেশবিদ্যা ইনস্টিটিউটের প্রফেসর খালেদ মিসবাহুজ্জামান, বাংলা বিভাগের শফিউল আযম, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান, আইন বিভাগের মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন, ইনিস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেসের সহকারী অধ্যাপক জুয়েল দাশ ও ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রিনক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী তানভীর আহাম্মদ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষক সমর্থিত হলুদ দল ও বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষক সমর্থিত সাদা দলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। শুধু ২০১৪ সালের সিনেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বয়কট করে অংশ নেয়নি সাদা দল। এছাড়া গত ৩৩ বছরে সব নির্বাচনেই অংশ নিয়েছিল দলটি।