চট্টগ্রাম মহানগরীর কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত যাত্রামোহন সেনগুপ্ত ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙার বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন হাইকোর্ট।
‘বাংলা কলেজ’ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভবনটি রক্ষায় করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এমএইচ আজিম।
পরে বিষয়টি নিশ্চিত করে আইনজীবী হাসান এমএইচ আজিম গণমাধ্যমকে জানান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ভবন ভাঙার বিষয়ে স্থিতাবস্থা জারি করেছেন উচ্চ আদালত। এ আদেশের ফলে ২০০ বছরের পুরানো সেই ভবন ভাঙা যাবে না।
এর আগে, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাসুদ আলম চৌধুরী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন। এতে সংস্কৃতি সচিব, প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ ছয়জনকে বিবাদী করা হয়
এছাড়াও আবেদনে ৫ জানুয়ারি দৈনিক পত্রিকায় এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। ওই খবরে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জের ‘বাংলা কলেজ’ এলাকায় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত একটি ভবন রক্ষায় বুলডোজারের সামনে বসে প্রতিবাদ জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।
সোমবার ওই জায়গার জনৈক ‘ক্রেতা’ পুলিশ ও লোকবলসহ ভবনটি ভাঙতে আসার খবর পেয়ে রানা দাশগুপ্ত ছুটে আসেন। জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জহর লাল হাজারীসহ অনেকেই তার পাশে দাঁড়ান। ভাঙার দৃশ্য দেখে বিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম নিতে আসা অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
বাংলা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল শামসুদ্দিন মুহাম্মদ ইসহাকের পরিবারের পরিচালনাধীন শিশুদের কিন্ডারগার্টেন ‘শিশুবাগ’র অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান বলেন, প্রিন্সিপাল ইসহাক ১৯৬৬ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু জমি কিনেন এবং কিছু জমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বাংলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আধুনিক শিশুশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিশুবাগ।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৮ সালে শিশুবাগ সরকারের অনুমোদন পায়। অর্ধশতাধিক বছরের প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানটিতে চসিক নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসেবেও তালিকাভুক্ত। জনৈক ক্রেতার ডিক্রির বিষয়ে আমাদের করা মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কবির হোসেন জানান, একটি দেওয়ানী মামলায় আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট নাজির ডিক্রিপ্রাপ্তদের জমি দখল বুঝিয়ে দিতে গিয়েছিলেন। সিএমপির সিটি স্পেশাল ব্রাঞ্চের নির্দেশে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে ছিলেন। দখল বুঝিয়ে দেয়া বা উচ্ছেদ করার কাজে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কোনো ভূমিকা ছিল না।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার ঐতিহাসিক স্থাপনা ভাঙার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে করে চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র। এরমধ্যে হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মাসুদ আলম চৌধুরী।