Tag: পিএসসি

  • মেয়েকে বিয়ের শর্তে জামাইয়ের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেন শ্বশুর

    মেয়েকে বিয়ের শর্তে জামাইয়ের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেন শ্বশুর

    পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার, নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সিআইডির পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে পিএসসির একজন সাবেক মেম্বার তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এই শর্তে যে, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিবো, তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। শ্বশুর ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি। শুধু মেয়ের জামাই নয়, জামাইয়ের বোনকেও একই কায়দায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় জামাই ও তার বোনকে উত্তীর্ণ করেছেন ফাঁস করা প্রশ্নের মাধ্যমে। জামাইও তার কথা রেখেছেন, উত্তীর্ণ হওয়ার পর পিএসসির তৎকালীন ঐ মেম্বারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এক পরিবারের ভাই-বোন এখন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা।

    ১৯৯৫ সাল থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হতো, তবে তা সীমিত পরিসরে। ২০০২ সাল থেকে ব্যাপক হারে প্রশ্ন ফাঁস হতো। প্রশ্ন ফাঁসের অফিস হয়ে দাঁড়িয়েছিল পিএসসি। যেখানে যা খুশি করা যেত। প্রিলিমিনারি ও লিখিত দুই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় নেতা থেকে শুরু করে রিকশাচালক, পান দোকানদারসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তার নাম এখন অনেকের মুখে মুখে। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। তার দলে থাকার সুযোগ নেই। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

    সিআইডির পর্যালোচনায় একটি ক্যাডার থেকে বেরিয়ে এসেছে, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ৭০ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে নারী মাত্র সাত জন। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৬ জেলায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হয়, এর মধ্যে নারী মাত্র চার জন। এখানে কোটা পূরণ করা হয়নি। ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৪ জেলায় কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হন, এর মধ্যে ৯ জন নারী। সিআইডি এই তিনটি বিসিএস পরীক্ষা পর্যালোচনা করেছে।

    এতে দেখা গেছে, যেসব জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তারাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধুমাত্র পুলিশ ক্যাডার নয়, সকল ক্যাডারে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা এই সুবিধা পেয়েছে।

    প্রশ্ন ফাঁস চক্রের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিসিএস পরীক্ষার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, পিএসসির সেই কর্মকর্তাদের অনেকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। অনেক কর্মকর্তা পলাতক রয়েছে। যাদের নাম আসছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

  • ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে, গ্রেফতারে শীর্ষ মহলের ‘সবুজ সংকেত’

    ফেঁসে যাচ্ছেন অনেকে, গ্রেফতারে শীর্ষ মহলের ‘সবুজ সংকেত’

    একযুগে ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আর এসব ফাঁস করা প্রশ্নে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন অনেকেই। প্রশ্নফাঁসে পিএসসির দুই উপপরিচালক, সহকারী পরিচালক ও দুইজন অফিস সহায়কসহ ১৭ জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় করা মামলা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে। মূলহোতাদের চিহ্নিত করার জন্য নানা তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইডি।

    গ্রেফতারদের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন, জব্দ মোবাইল ফোনের তথ্য ও জবানবন্দির ভিত্তিতে ফেঁসে যেতে পারেন পিএসসির বেশকিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসে চাকরি পাওয়া কর্মকর্তারা।

    প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের গ্রেফতারে সরকারের শীর্ষ মহলের সবুজ সংকেত রয়েছে বলেও জানা গেছে। এরই মধ্যে গ্রেফতারে ছয়জনের জবানবন্দিতে নাম আসা পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী, চাকরি পাওয়া কর্মকর্তা ও প্রশ্নপত্র বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে মাঠে কাজ করছে সিআইডির গোয়েন্দা দল।

    তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিএসসির পরীক্ষা-শাখা (নন-ক্যাডার), তথ্য-প্রযুক্তি শাখা, ইউনিট-১২ ও পিএসসি সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের বেশকিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে এসেছে। পিএসসির ডেসপাস রাইটার খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলামের জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

    একটি সূত্রে জানা গেছে, পিএসসির অন্তত ছয় কর্মকর্তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৯ জনের তথ্য পেয়েছে সিআইডি। যারা পরীক্ষার বুথ পরিচালনা ও টাকা সংগ্রহ করতেন। এছাড়া মামলায় পলাতক কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হবে।

    পাওয়া যাচ্ছে আরও যে পাঁচ কর্মকর্তার নাম
    রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে। কেবল এই ছয়জনই নন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে পিএসসির আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে এসেছে, যারা বিভিন্ন সময় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তাদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তাও আছেন। আবার অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও আছেন।

    এই পাঁচজন হলেন, পিএসসির পরিচালক এনামুল বশির, সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান।

    পিএসসি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পাঁচজনকেই একসময় চাকরিচ্যুত করেছিল পিএসসি। পরে এনামুল বশির ও আবদুর রউফ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান চাকরিচ্যুত হয়েছেন দুই বছর আগে। সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায় গত বছর অবসরে গেছেন।

    সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, বেশকিছু নতুন তথ্য পেয়েছি। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা প্রয়োজন। রিমান্ডে আসামিদের পেলে সবকিছু বিষয় জানা যাবে।

    যে কারণে ৬ জনকে রিমান্ডে চায় পুলিশ

    যাদের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে তারা হলেন, পিএসসির উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, পিএসসির সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির, উপপরিচালক আবু জাফর, প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায়, মিরপুরের পোশাক কারখানার ব্যবসায়ী নোমান সিদ্দিকী ও ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম।

    রিমান্ডে নিয়ে যা জানতে চাইবে সিআইডি

    বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বাংলাদেশ রেলওয়ে), পদের নাম, সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (নন ক্যাডার) নিয়োগ পরীক্ষার মূল প্রশ্ন তারা কীভাবে সংগ্রহ করতেন এবং তাদের কে সরবরাহ করতেন। প্রশ্নফাঁসের এই চক্রটির সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত। কীভাবে তারা প্রশ্নফাঁস করতেন। কারা কারা কীভাবে তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করতেন। কীভাবে নিয়োগপ্রার্থী পরীক্ষার্থীর কাছে ওই পদের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করতেন। কতজন নিয়োগপ্রার্থী পরীক্ষার্থীর কাছে ওই পদের প্রশ্ন এবং প্রশ্নের উত্তর বিতরণ করা হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের এই চক্রটির দ্বারা প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে মোট কত পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছে। লেনদেন করা অর্থের সুবিধাভোগীদের শনাক্ত করা। মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ আলামত উদ্ধারসহ এসব বিষয়ে রিমান্ডে ওই ছয় আসামির কাছে জানতে চাইবে সিআইডি।

    মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করবে সিআইডি

    বিসিএসসহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীও রয়েছেন। বিএফআইউ সূত্র জানায়, ব্যাংক হিসাব জব্দ সংক্রান্ত চিঠি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ থাকবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

    পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুদকে পিএসসির চিঠি

    বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (বিপিএসসি) ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তাসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯ জুলাই সাময়িক বরখাস্ত করে পিএসসি। ১০ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছেন পিএসসির দুই উপ-পরিচালক আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক আলমগীর কবির, ডেসপাচ রাইডার খলিলুর রহমান ও অফিস সহকারী সাজেদুল ইসলাম।

    কারাগারে ১১ আসামি

    কারাগারে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন, পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাপ্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান ও ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল। তাদের মধ্যে সোহেল স্বীকারোক্তি দিতে না চাইলে তাকেও কারাগারে পাঠানো হয়।

    যে ছয়জনের দায় স্বীকার

    প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় করা মামলায় পিএসসির গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ছয়জন দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যরা হলেন- পিএসসির অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, অফিস সহায়ক (ডেসপাস) সাজেদুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং বেকার যুবক লিটন সরকার।

    পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিলসহ ১৪ জন এখনো পলাতক

    মামলার পলাতক আসামিরা হলেন, পিএসসির সাবেক সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, মো. শরীফুল ইসলাম, দীপক বনিক, খোরশেদ আলম খোকন, কাজী মো. সুমন, একেএম গোলাম পারভেজ, মেহেদী হাসান খান, গোলাম হামিদুর রহমান, মিজানুর রহমান, আতিকুল ইসলাম, এটিএম মোস্তফা, মাহফুজ কালু, আসলাম ও কৌশিক দেবনাথ।

    যা বলছে পিএসসি

    পিএসসি সূত্র জানিয়েছে, প্রশ্নফাঁসে জড়িতদের ধরতে নিজেদের গঠিত তদন্ত কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। পিএসসির প্রশ্ন প্রণয়নকারীসহ সংশ্লিষ্ট কাউকে সন্দেহের বাইরে রাখা হচ্ছে না। পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান পিএসসির যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম বলেন, তদন্তকাজ সম্পন্ন করতে ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। যেসব ইস্যু নিয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করছি।

    সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। চক্রের সঙ্গে যারা জড়িত প্রত্যেকের বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলমান। আসামিদের দেওয়া তথ্য, ডিজিটাল প্রমাণ ও আলামত যাচাই-বাছাই করে আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করছি।

    তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর দায় স্বীকার করে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, বাকিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে আবেদন করা হবে। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় যাদের নাম আসবে, তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।

  • প্রশ্ন ফাঁসে ১০ বছর জেল

    প্রশ্ন ফাঁসে ১০ বছর জেল

    সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভুয়া পরিচয়ে কেউ অংশ নিলে ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন হচ্ছে।

    বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৭৭ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়নে আজ সোমবার সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হয়।

    জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বিল ২০২২ জাতীয় সংসদে তুললে বিলটি পরীক্ষা করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

    বিলটি উত্থাপনের আপত্তি তোলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি সব ধরনের চাকরি ও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে দাবি করে বলেন, দক্ষ জনবল নিয়োগর বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য–উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ার পর পুলিশি যাচাইয়ের নামে ভিন্নমতের প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রতিকারের বিষয়ে আইনে কিছু নেই। তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে অভিন্ন একটি আইন করার দাবি জানান।

    হারুনের বক্তব্যের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অতীতে প্রশ্নফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ২০০১–২০০৬ সালে বেশি ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে কণ্ঠভোটে হারুনের আপত্তি নাকচ হয়ে যায়।

    বিলে বলা হয়েছে, একজন সভাপতি, অন্তত ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। বিদ্যমান আইনে ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সাজার বিধান ছিল না। নতুন আইনে সেটি যুক্ত করা হয়েছে।

    কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

    বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ দণ্ডণীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।

    বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ বিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্টা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।

    বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা এখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার দণ্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড ও অর্থদণ্ড।

    বিলের বিধান অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য অপরাধের সাজা মোবাইল কোর্টের আওতায়ভুক্ত হবে।

    বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) আইন কার্যকর আছে। এই আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এবং পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

    ২৪ঘণ্টা/এনআর

  • ভুল চিকিৎসার অভিযোগ : মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে পিএসসি পরীক্ষার্থী ইয়ামিন

    ভুল চিকিৎসার অভিযোগ : মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে পিএসসি পরীক্ষার্থী ইয়ামিন

    ২৪ ঘন্টা ডেস্ক : চট্টগ্রামের হালিশহর ছোটপুল ব্রীক ফীল্ড রোড এলাকার ইয়াকুবের ছেলে ইয়ামিন (১২)। সে ছোটপুল সিটি স্কুলের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র।

    আগামী ১৭ নভেম্বর পিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিলো। পরীক্ষা দেয়া তো দুরে থাক বর্তমানে ঢাকার অ্যপোলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ইয়ামিন।

    অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়ার পর ইয়ামিনের পরিবার বুঝতে পেরেছে তাদের সন্তান ভুল চিকিৎসায় কষ্ট পাচ্ছে। ফলে স্থানীয় ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ মাহাম্মদ জাফর হোসাইনের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে হালিশহর থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইয়ামিনের পরিবার।

    এসব তথ্য ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ভুক্তোভোগী ইয়ামিনের চাচা বাবুল। তিনি বলেন, গত ৩১ অক্টোবর স্কুলে ছিলো ইয়ামিন। হঠাৎ চোখে যন্ত্রনা শুরু করলে সে বাসায় চলে আসে।

    সেদিন ইয়ামিনকে স্থানীয় ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ মাহাম্মদ জাফর হোসাইনকে দেখানো হয়। বাবুলের অভিযোগ কোন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই এন্টিবায়েটিক ঔষধ প্রয়োগ করে ওই চিকিৎসক। তার দেয়া প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষুদ সেবনের পর ইয়ামিনের পুরো শরীর লাল বিচি দেখা দেয়। অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করতে থাকে ইয়ামিন।

    পরবর্তীতে তাকে স্থানীয় ইসলামিক ব্যাংক হাসপাতাল এরপর ২ নভেম্বর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করানো হই।

    সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা ইয়ামিনের অবস্থা গুরুতর বললে ৪ নভেম্বর ঢাকা এ্যাপোলে হাসপাতালে নেওয়া হয় ইয়ামিনকে। চট্টগ্রাম এবং ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন ঔষধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় ইয়ামিনের এই অবস্থা।

    তিনি ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ মাহাম্মদ জাফর হোসাইন এর বিরুদ্ধে ইয়ামিনের পরিবারের পক্ষ থেকে হালিশহর থানায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বলে  জানান।

    এই বিষয়ে হালিশহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঘটনাটি খুবই দু:খজনক। আমরা এই ব্যাপারে তদন্ত করে দেখছি।

    এ্যাপোলোর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ঔষধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়ায় ইয়ামিনের এই অবস্থা। প্রসাবের সাথেও রক্ত বের হচ্ছে। আল্লার উপর ভরসা করা ছাড়া কোন উপায় নেই। এমন খবরে ইয়ামিনের পরিবার স্বজন এবং এলাবাসীর মাঝে হতাশা এবং ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

    এদিকে এ বিষয়ে জানতে ডাঃ সৈয়দ মোহাম্মদ মাহাম্মদ জাফর হোসাইন এর মোবাইল ০১৮৬০….৮৫ ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।