স্বপ্ন বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু টানেল

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় চট্টগ্রামের উন্নয়নে মোট তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। ২০২৪ সালে কক্সবাজারে ট্রেন, ২০২৩ সালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর চলতি ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের(চউক) প্রথম দুটি ও বাংলাদেশ ব্রিজ অথোরেটি(বিবিএ)’র বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প। বঙ্গবন্ধু টানেলের এ পর্যন্ত ৯২ ভাগ কাজ শেষ হওয়ায় আগামী ডিসেম্বরে চালু হয়ে যাবে বঙ্গবন্ধু টানেল ও এপ্রোচ সড়ক এমন ধারনা প্রকৌশলীদের।

বাংলাদেশ সেতু বিভাগের(বিবিএ) সূত্রে জানা গেছে, সেতু বিভাগের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ দেশের প্রথম ও একামাত্র টানেল। চায়না কমিউনিক্যাশন কন্সট্রাকশন কোম্পানী (সিসিসিসি) নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই টানেলের কাজ করছে। কনস্যালটেন্ট হিসেবে কাজ করছে এসএমইসি — সিওডব্লিওআই।

বঙ্গবন্ধু টানেলের কারনে আনোয়ারার উন্নয়ন অর্শ্বের গতিতে ছুটে চলা উন্নয়নের স্বপ্ন। যা বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা পর্যটন এলাকার পরিপূর্ণতা পাবে। এদিকে, আনোয়ারায় ৪ হাজার ৯৫২ মিটার এপ্রোচ সড়কের উন্নয়নে মহা খুশি এলাকার সাধারন মানুষ।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর অ্যালাইনমেন্ট হয়েছে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট থেকে কর্ণফুলী নদীর দুই কিলোমিটার ভাটির দিকে। বঙ্গবন্ধু টানেলের দুটি টিউব চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে।

টানেলের প্রবেশপথ নেভি কলেজের কাছে আর বহির্গমন পথ কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ের সিইউএফএল সার কারখানা সংলগ্ন ঘাট দিয়ে। প্রকল্প সাইটের উভয়দিকে বগুড়ার আরডিএ কর্তক চারটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে প্রকল্পের পানির চাহিদা মেটানো হয়েছে।

এছাড়াও পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উভয়দিকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার পতেঙ্গা প্রান্তে ১৫ মেগাওয়াট স্থায়ী বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার আনোয়ারা প্রান্তে বিদ্যুত সাবস্টেশন নিমার্ণ করেছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড।

বিবিএ’র ইস্টিমিটেড কস্ট এনালাইসিস থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ মানেই ‘মাল্টি-ল্যান্ড রোড টানেল আন্ডার দ্যা রিভার কর্ণফুলী’। এই টানেলে থাকছে দুটি টিউবের ন্যায় চারলেনের সড়ক নিমার্ণ পরিকল্পনা।

উভয়দিকে টানেলের মুখ থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নিমার্ণ হচ্ছে। এই টানেলের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ১০৫৫ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন।

এরমধ্যে সরকারী অথার্য়ন থেকে আসছে ২ হাজার ৮০০ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার বা ৩৫০ দশমিক শূণ্য তিন মিলিয়ন।

প্রজেক্ট এসিসট্যান্স থেকে বিনিয়োগ করা হচ্ছে ৫ হাজার ৬৪৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭৫০ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন।

সেতু বিভাগের হিসেব অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুলেন বিশিষ্ট সড়ক নিমার্ণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী দেখা গেছে, ৪ লেন বিশিষ্ট এপ্রোচ সড়কের মধ্যে রয়েছে পতেঙ্গা অংশে ৫৫০ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ৪ হাজার ৯৫২ মিটার। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৯ হাজার ২৬৫ দশমিক ৯৭ মিটার।

টানেলের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টানেলের বাহিরে পতেঙ্গা এলাকায় কাটা হবে ২০০ মিটার আর আনোয়ারায় কাটা হবে ১৯০ মিটার। কার্যপরিধি ২৫ মিটার। আনোয়ারা অংশে ফ্লাই-ওভারের দৈর্ঘ্য ৬৩৭ মিটার। মোট ৫ বছর সময়ের মধ্যে প্রায় ৪ বছর অতিক্রান্ত হল।

তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই এই টানেলের কাজ শেষ হবে বলে সেতু বিভাগের কয়েক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। ১২ মিটার বৃত্তাকার এই টানেল আচ্ছাদিত অংশ পতেঙ্গা অংশে ১৯৫ মিটার আর আনোয়ারা অংশে ২৩০ মিটার।

বর্তমান সরকারের বৃহদায়তন প্রকল্পের উন্নয়ন টার্গেট অনুযায়ী, ২০২২ সালে পতেঙ্গাকে টার্নিং পয়েন্ট করতে এখন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের (চউক) দুটি ও বাংলাদেশ ব্রিজ অথোরেটি (বিবিএ)’র একটি প্রকল্প।

২০১৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমূদ্র উপকূলে গড়া এপ্রোচ সড়কে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল’ এর বোরিং কার্যক্রম আর চউকের ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে’র উদ্বোধন করেছেন।

২০২২ সালের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল বাংলাদেশ ব্রীজ অথরিটি (বিবিএ)’র তত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান টানেল ও চউকের অথার্য়নে এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে।

বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ হারুন অর রশিদের কাছে টানেলের অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলে তিনি জরুরী বৈঠকে থাকায় তাঁর মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে প্রকল্পের সাইটে কর্মরত এক প্রকৌশলী বলেন,প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে।

নতুন যোগাযোগ ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে। বদলে যাবে চট্টগ্রামের চিত্রও। বৃদ্ধি পাবে চট্টগ্রাম বন্দরের গতিশীলতা।

২৪ ঘণ্টা / জেআর

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *