চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ব্যয় বাড়লো!

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের যানজট নিরসনে এবং বিমানবন্দরে সঙ্গে যোগাযোগ দ্রæত করতে উড়ালসড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে এক ধাক্কায় ব্যয় বাড়লো ১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা আর মেয়াদ বেড়েছে আরো ২ বছর। সেই সঙ্গে তিন বছরের এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে সাত বছরে। গতকাল ১৩ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের জন্য এ খরচ ও সময়সীমা বৃদ্ধির বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।
লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ উড়ালসড়ক নির্মাণ কাজের কারণে এমনিতেই কয়েক বছর ধরে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে চট্টগ্রামবাসী।
এ নিয়ে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)’র বিরুদ্ধে ক্ষোভও রয়েছে জনগণের। এখন নতুন করে এক্সপ্রেসওয়েটির অ্যালাইনমেন্ট,
র্যাম্প ও স্প্যানের দৈর্ঘ্যে পরিবর্তন আনার প্রস্তাবে কাজ শেষের সময় বাড়লে সড়কের বিদ্যমান দুর্ভোগও দীর্ঘায়িত হবে। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) যৌথ প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-রাঙ্কেনের মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩ হাজার ২’শ ৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা এবং কাজ শেষ করার জন্য সময়সীমা নির্ধারিত ছিল ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। এ প্রকল্প ব্যয় ৩২ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ হাজার ২’শ ৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা করার জন্য আজ একনেক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। সেইসঙ্গে এর সময়সীমা ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেছেন, নকশায় ‘সংশোধন’ আনার কথা বললেও আগের নকশায় কোনো ত্রæটি ছিল না বলে দাবি করছেন। তিনি বলেছেন, প্রকল্পটি গ্রহণের আগে নকশা করার সময় বন্দর, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ সকল প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বসি। তাদের সম্মতি নিয়েই নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরে প্রকল্পের অনুমোদন নিয়ে কাজ করতে গেছি তখন পোর্ট বাঁধা দেয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যেপথে নির্মাণ হচ্ছে সেখানে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাত এলাকা (কেইপিজেড), সিমেন্ট ক্রসিং, নৌবাহিনী, সিইপিজেড, বন্দর এলাকা, কাস্টমস সার্কেল এবং আগ্রাবাদ এলাকার ২০টি জংশন রয়েছে। মূল নকশায় স্প্যানের দৈর্ঘ্য রাখা হয় ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। এখন নতুন নকশায় তা বাড়িয়ে ৪৫ থেকে ৫০ মিটার করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া ভূমিতে রাস্তার প্রশস্ততা ঠিক রাখতে পিয়ারের পরিসর কমিয়ে নকশায় সংশোধন আনার কথা প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে। পাশাপাশি কংক্রিটের গ্রেডের পরিবর্তনসহ অতিরিক্ত নির্মাণ ব্যয় এবং কিছু অংশের পরিমাণ বাড়া ও কমার কারণে ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
চউক নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্পটির পরিচালক বলেন, আসলে এ প্রকল্পের জন্য সলিড কোনো সমীক্ষাই করা হয়নি। মূল উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ১৩৮ কাঠা বেসরকারি ও সরকারি জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরোধিতার পর এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় একটি বড় পরিবর্তন করতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পটির জন্য ৬’শ কাঠা জমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করতে হবে। এর ফলে এ খাতের ব্যয় ২’শ কোটি টাকা বেড়েছে।
বিদ্যুতের খুঁটি অপসারণ ও মাটির নিচে বিদ্যুতের তার স্থাপনসহ ইউটিলিটি লাইন স্থানান্তরের ব্যয় ১৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২’শ ২০ কোটি টাকা হয়েছে উল্লেখ তিনি বলেন, টোল প্লাজা নির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেম ও ১’শ টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মতো নতুন উপাদান অন্তর্ভুক্ত করায় প্রকল্পের ব্যয় আরো ১’শ কোটি টাকা বেড়েছে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জে-আর
আপনার মতামত লিখুন