খুঁজুন
বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঙালির অর্জন ও বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ : প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২২ জুন, ২০২৩, ১১:৪৮ অপরাহ্ণ
বাঙালির অর্জন ও বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখন্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ।   

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মাটি ও মানুষের দল। জনগণই আওয়ামী লীগের মূল শক্তি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই ’৬২-এর ছাত্র আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ’৬৬-এর ছয়দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি মুক্তির সনদ রচনা এবং ’৬৯-এর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরশাসন অবসানের প্রতিশ্রুতি অর্জন দলটিকে মুক্তিকামী মানুষের আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে  এ কথা বলেন। এ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী  সংগঠনের সকল নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে। একইসাথে স্মরণ করেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জাতীয় চার নেতা, স্বাধিকার আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদগণসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের-যাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেয়েছি এবং আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গণমানুষের প্রাণের সর্ববৃহৎ সংগঠন।

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে বাঙালি জাতির মুক্তি এবং ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩-২৪ জুন এক সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলটি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল অসাম্প্রদায়িকতা ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করা ও বিশ্বশান্তির পথকে প্রশস্ত করা। কারাবন্দি অবস্থায় তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সাংগঠনিক তৎপরতার জন্য ১৯৫৩ সালের নভেম্বরে দ্বিতীয় সম্মেলনেই তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। কালের পরিক্রমায় তিনি হয়ে উঠেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এবং বাঙালির জাতির পিতা।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখন্ডে প্রতিটি প্রাপ্তি ও অর্জন সবই জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাঙালির অর্জন এবং বাংলাদেশের সকল উন্নয়নের মূলেই রয়েছে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। জন্মলগ্ন থেকেই সংগঠনটি ভাষা-শিক্ষা’র অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’- দাবিতে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ সচিবালয়ের ১নং গেইট থেকে পিকেটিং করার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। তাঁর পরামর্শে ’৫২-এর ২১ ফেব্রুয়ারি ‘ভাষা দিবস’ সমর্থনে ধর্মঘট আহ্বান ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত এবং কারান্তরীণ অবস্থায় অনশন ঘোষণা ভাষা আন্দোলনের লক্ষ্য অর্জনকে ত্বরান্বিত করে। ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ ২১-দফা ইশতাহারের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে এবং মন্ত্রিসভা গঠন করে। কিন্তু, পাকিস্তানের গভর্নর সে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করে।

১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক শাসন জারির ফলে বাংলার মুক্তিকামী মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাধাগ্রস্থ হয়। দৃঢ়-প্রত্যয়ী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তৃণমূল পর্যন্ত দলের সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে মনোনিবেশ করেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের জন্যই আওয়ামী লীগকে ’৭০-এর নির্বাচনে পূর্ব-বাংলার মানুষ তাদের মুক্তির ম্যান্ডেট দিয়েছিল। জাতীয় এবং প্রাদেশিক পরিষদে দলটি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনগণের এ রায়কে উপেক্ষা করে, শুরু করে প্রহসন। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সকল সংসদ সদস্য ৬-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম; এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর গণহত্যা শুরু করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর পরপরই পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তা সরকার জাতির পিতাকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণশক্তি। তাঁর অবিচল নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মরণপণ যুদ্ধ চালিয়ে যায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপরিষদ গঠন করে বাংলাদেশের প্রথম সরকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করে। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে এবং সেদিন এ স্থানটির নাম মুজিবনগর রাখা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল- স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী’র দায়িত্ব গ্রহণ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সংবিধানে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর করেন। জাতির পিতার আহ্বানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বন্ধু দেশসমূহ দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তাঁর নেতৃত্বে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়ায় এবং স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এই জঘন্য হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতা বিরোধী চক্র হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। তারা ইনডেমনিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথকে বন্ধ করে দেয়।

তিনি বলেন, ‘বিদেশে থাকায় আমি এবং আমার বোন শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যাই। জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে, সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে, বিদেশে দূতাবাসে চাকুরি দেয়। স্বাধীনতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়, রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার করে। ব্যবসা করার সুযোগ দিয়ে তাদের বিপুল অর্থের মালিক করে দিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। বিদেশে থাকা অবস্থায় ’৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে আমাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করে। নানা বাধা উপেক্ষা করে ’৮১ সালের ১৭ মে আমি দেশে ফিরে এসে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করি এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করি ।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং স্বাধীনতা বিরোধী চক্র ও অবৈধ সেনাশাসকদের নির্যাতন আর নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মী, সমর্থকেরা জীবন দিয়ে সকল প্রতিকূলতা, ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করে। উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদেশ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়। আমরা ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ সংসদে পাশ করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করি। আওয়ামী লীগ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারো মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের এই পাঁচ বছরে দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নব দিগন্তের সূচনা হয়।

তিনি বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুঃশাসন, অত্যাচার নির্যাতন ও দমন নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম এবং ২০০৭ থেকে ২০০৮ অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ‘দিন বদলের সনদ’ ঘোষণা দিয়ে ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের ভোটে পুনরায় নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে এবং সেই থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৮৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১.৫ শতাংশ হতে কমে ১৮.৬ শতাংশ এবং অতি দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ৫.৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। প্রান্তিক অঞ্চলেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ফলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান সহজ হয়েছে। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে আমাদের স্বার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি। সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের নিজেদের অর্থে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাংগা রেল সার্ভিস শীঘ্রই চালু করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও উন্নত করেছি আমাদের সরকার কর্তৃক একদিনে ১০০ সেতু ও একদিনে ১০০ সড়ক উদ্বোধন বিশ্বে বিরল উদাহরণ। আমরা দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। ১৯৯৭ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ পরিবারকে বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমাদের সরকার জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছে। এ হত্যাকান্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়। ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে এবং রায়ও কার্যকর করা হচ্ছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছে, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’

জাতির পিতার আদর্শ এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমাদের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা লড়াই-সংগ্রাম ও মানুষের আস্থা অর্জন করে আওয়ামী লীগকে জনমানুষের সংগঠনে পরিণত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নেতা-কর্মীদের মেধা, পরিশ্রম, ত্যাগ ও দক্ষতায় আওয়ামী লীগ আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হবে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্র বিরোধী দেশি-বিদেশি অপশক্তি এখনও নানাভাবে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যে কোন অপতৎপরতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে তিনি দলের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।

Feb2

শরণার্থী শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ণ
শরণার্থী শিবিরে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার কক্সবাজারে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন। প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার চার দিনের সফরে বাংলাদেশ আসছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের চার দিনব্যাপী এ সফরসূচি তুলে ধরেন উপ-প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার। তিনি বলেন, আন্তোনিও গুতেরেস বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় ঢাকায় আসবেন। ১৬ মার্চ তিনি ফিরে যাবেন। এই চার দিনের মধ্যে মূলত শুক্র ও শনিবার তাঁর মূল কর্মসূচিগুলো আছে।

তিনি জানান, শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি সেই দিন রোহিঙ্গা শিবিরে চলে যাবেন। একই সঙ্গে কক্সবাজারে যাবেন প্রধান উপদেষ্টা। তবে কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টার আলাদা কর্মসূচি আছে। জাতিসংঘের মহাসচিব কক্সবাজার থেকে সরাসরি রোহিঙ্গাশিবিরে চলে যাবেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সেখানে তাঁর কর্মসূচিগুলো শেষ হওয়ার পর তিনি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করবেন। আর প্রধান উপদেষ্টা তাঁর কক্সবাজারের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি শেষ করে এই ইফতারে অংশ নেবেন।

আজাদ মজুমদার বলেন, ‘আমরা আশা করছি, প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে এক লাখ রোহিঙ্গা ইফতারে যোগ দেবেন। এই ইফতার আয়োজন করা হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্যে।’ তিনি বলেন, পরদিন শনিবারও জাতিসংঘের মহাসচিব একটি কর্মব্যস্ত দিন কাটাবেন। তিনি সকালে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। তারপর দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া তিনি সেদিন সংবাদ সম্মেলনেও বক্তব্য দেবেন। সেদিনই জাতিসংঘের মহাসচিবের সম্মানে ইফতার ও রাতের খাবারের আয়োজন করছেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে জাতিসংঘের মহাসচিব যোগ দেবেন। পরদিন তিনি বাংলাদেশ ছাড়বেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের বাংলাদেশে এটি দ্বিতীয় সফর হবে। এই সফর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালে তিনি একবার বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। সরকার বিশ্বাস করে, জাতিসংঘের মহাসচিবের এই সফরের ফলে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আবার বৈশ্বিক আলোচনায় আসবে। সরকার আশা করে, এ বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব একটি ভালো বার্তা দেবেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ৯:১৮ অপরাহ্ণ
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টেস্ট ও টি২০ থেকে আগেই অবসর নেওয়ায় শুধু ওয়ানডে খেলতেন ৩৯ বছর বয়সী এ ব্যাটার। আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ঘোষণায় ওয়ানডে ক্রিকেটকেও বিদায় বললেন তিনি। তাঁর ওয়ানডে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার অর্থ হলো- আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেওয়া।

রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর। আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার সকল সতীর্থ, কোচ এবং বিশেষ করে আমার ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই, যারা সবসময় আমাকে সমর্থন দিয়েছে।’

আগের দিন মঙ্গলবার জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বিসিবি এ দিন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মার্চ মাস থেকে চুক্তিতে না রাখার অনুরোধ করেছেন মিডলঅর্ডার এ ব্যাটার। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলায় এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পাবেন তিনি। ওয়ানডে থেকে অবসর নেওয়ায় মুশফিকুর রহিম মার্চ থেকে অবনমিত হবেন ‘বি’ ক্যাটেগরিতে। মাহমুদউল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণা না দিলেও কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার অর্থ হতে পারে জাতীয় দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকছেন না।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ইতি টানার আগে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল, মাশরাফি বিন মুর্তজাও কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। মাশরাফি আনুষ্ঠানিক বিদায় না বললেও তামিম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন গত জানুয়ারিতে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মুশফিক।

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ৩:০৮ অপরাহ্ণ
পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করেছেন।

সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তিনি।সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করিডোরে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন ড. এম আমিনুল ইসলাম।

প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে চাইছি না। আমি আমার পিএসের মাধ্যমে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, সরকারের চাওয়া অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করেছেন।

গত প্রায় সাত মাসে কয়েক দফায় উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল ও নতুন নিয়োগ হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাসহ এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা ২৩ জন।

তাদের মধ্যে গত বুধবার অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার (সিআর আবরার) উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এত দিন শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এখন কেবল পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে গত নভেম্বরে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় ৩ জনকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এই তিন বিশেষ সহকারী স্বরাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাদের সহযোগিতা করছেন। এই তিনজনের মধ্যে শিক্ষার দায়িত্বে ছিলেন অধ্যাপক এম আমিনুল ইসলাম।