শাস্তি পাচ্ছেন এসএসসি পাস করে নিয়োগ পাওয়া সেই প্রকৌশলী

এসএসসি পাস করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সেই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবা আইরিনের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়।
অভিযুক্ত আমির আবদুল্লাহ খান বর্তমানে চসিকে বিদ্যুৎ শাখার সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- চসিকের বিদ্যুৎ শাখায় কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী আমির আব্দুল্লাহ খান ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি যোগদান করলেও তিনি মূলত ২০১৪ সালে পরীক্ষা দিয়ে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেছেন। তার দাখিলকৃত সাময়িক সনদপত্রটি ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল তারিখের। যোগদানকালীন সময়ে তিনি ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেননি।
এছাড়া ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি তারিখের নিয়োগ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে উপসহকারী পদে যোগদানকালীন সময়ে দাখিলকৃত কোর্স কমপ্লিশন সার্টিফিকেট ডিপ্লোমা পাসের সনদ নয়। তার কার্যকলাপ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের চাকুরি বিধিমালা-২০১৯ মোতাবেক অসদাচরণের শামিল। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ বিধিমালার ৩ (২) উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে কোনো পদে নিয়োগ করা হইবে না, যদি এটির জন্য তার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, আমির আব্দুল্লাহ খান ডিপ্লোমা পাস না করেও জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিতকরণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
জানা গেছে, সম্প্রতি আমির আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ২ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় আমির আবদুল্লাহ খানের জালিয়াতি তদন্ত করার জন্য চসিককে নির্দেশ দেয়। ৩ ডিসেম্বর আইন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মহিউদ্দিন মুরাদকে প্রধান করে কমিটি গঠন করে চসিক। ওই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন চসিকের শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার এবং সদস্য ছিলেন চসিকে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম। কার্যক্রম শেষে তারা প্রতিবেদন ১৮ ডিসেম্বর জমা দেন। এরপর এটি চসিকেই পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। কয়েকদিন পর প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে না পাঠানোর বিষয়টি জানাজানি হয়৷ এরপর তড়িঘড়ি করে ৭ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয়ের শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
একটি কোর্স কমপ্লিট করার কাগজ দিয়ে ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল বাতি পরিদর্শক হিসেবে চসিকে যোগদান করেন আমির আবদুল্লাহ। তিনি তখন নিজেকে ডিপ্লোমা পাস বলে উল্লেখ করেন। যদিও তখনো কাগজে-কলমে এসএসসি পাস। ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাতি পরিদর্শকের বেতনে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান আমির আবদুল্লাহ। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি আগের সব নিয়োগ বাতিল করে তাকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেয় চসিক। তখনো তার এসএসসির ওপরে আর সনদ ছিল না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমির আবদুল্লাহ খান ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ডিপ্লোমা পাস করতে পারেননি। ২০০১ সালে তিনি সিটি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হাসানের সঙ্গে যৌথভাবে নগরের চকবাজার আলী প্লাজায় ‘হাসান এন্টারপ্রাইজ’ নামে একটি টিভি সার্ভিসিং সেন্টার খুলেন। যেখানে টিভি, ফ্রিজ, আইপিএস মেরামত করা হয়। চসিকে নিয়োগের আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বেপরোয়া হয়ে উঠেন অভিযুক্ত আমির আবদুল্লাহ খান। নিজেকে শ্রমিক লীগ নেতা পরিচয় দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।
এ বিষয়ে চসিকে সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন বলেন, মন্ত্রণালয়ে জমা হওয়া একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিত চসিকের সহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। তদন্ত শেষে মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে অভিযুক্ত আমির আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
আপনার মতামত লিখুন