পীরগঞ্জে খেজুরের রসে তৈরি হচ্ছে বিষমুক্ত গুড়

গৌতম চন্দ্র বর্মন,ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গাছিরা।
গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে উপজেলার বৈরচুনা গ্রাম। এতে কাজও জুটেছে এলাকার কিছু মানুষের। এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে তাল-খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
ভোরের কুয়াশা ভেদ করেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। এর পর পাটালি গুড় তৈরি শুরু করেন তারা। এমন দৃশ্য পীরগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী বৈরচুনা গ্রামে। প্রতিদিন ৫০-৬০ কেজি গুড় উৎপাদন হয় এই গ্রামে। রাস্তার শোভা বর্ধনের জন্য খেজুর গাছ রোপন করেছিলেন গ্রামের মোকসেদ ও সলেমান নামে এই দুই ভাই। তাদের দেখে গ্রামে অনেকেই বাড়ির পতিত জমিতে খেঁজুর গাছ লাগান। এসব গাছের রস থেকে তৈরি হচ্ছে গুড়।
ঐ গ্রামের আব্দুল লতিফ ঠাকুরগাঁও প্রতিদিনকে জানান, রাজশাহী থেকে কয়েক জন লোক প্রতিবছর শীতের সময় এখানে এসে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করে থাকে। গোটা শীত মৌসুম তারা এখানে অবস্থান করে গুড় তৈরী করে বিক্রি করে থাকেন। তারা ১৫/১৬ বছর ধরেই এ কাজ করে আসছেন। প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে অনেক মানুষ রস ও গুড় নিতে ভীড় জমায় এই গ্রামে। অন্যের খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য তাদের কোন টাকা লাগে না। গাছ মালিককে মাঝে মধ্যে গুড় খাওয়ায় তারা। স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, রসনা বিলাস খেজুর গুড়ের জুড়ি মেলানো ভার। খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে পিঠা, পায়েস, মিস্টান্ন সহ নানা মুখরোচক খাবার। তাই এর চাহিদার প্রচুর।
গুড় তৈরী সাথে জড়িতরা জানান, কোন প্রকার ক্যামিকেল ছাড়াই এ গুড় তৈরী করা হয়। এজন্য এর চাহিদা বেশি। প্রতিদিন তারা ৫০ থেকে ৬০ কেজি গুড় তৈরী করে থাকেন। প্রতি কেজি ১২০ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। বাজারে নিতে পারেন না। তৈরীর সাথে সাথেই সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এতে মাসে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয় তাদের। রাজশাহীর ৪ জন ছাড়াও তাদের সাথে স্থানীয় কিছু লোকের কাজ জুটেছে বলেও জানান তারা।
এদিকে খেজুর গুড়ের সম্ভাবনা নিয়ে পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিস্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগ তাল-খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে ঠাকুরগাঁও প্রতিদিনকে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস এম গোলাম সারওয়ার। তার মতে জেলায় ১০ থেকে ১৫ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। তবে একমাত্র পীরগঞ্জ উপজেলায় রস দিয়ে গুড় তৈরি হচ্ছে। এটার গুনগত মান ভাল। স্থানীয় ভাবে খেজুর এবং তাল গাছ রোপণে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন