বিভিন্ন দেশে বাড়ছে লকডাউনের মেয়াদ

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। এ পর্যন্ত ২০৯টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে ভাইরাসটি। বেশির ভাগ দেশে করোনা ঠেকাতে পুরো বা আংশিক লকডাউন চলছে। এতে গৃহবন্দি জীবনযাপন করছেন বিশ্বের অর্ধেকের বেশি মানুষ। কিন্তু তাতেও করোনার প্রাদুর্ভাব কমছে না। এ কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউনের মেয়াদ ফের বাড়ানো হয়েছে।
কোনো কোনো দেশে নতুন করেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক মাসের জরুরি অবস্থা জারি করেছেন জাপানের প্রেসিডেন্ট শিনজো আবে। দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ফিলিপাইনে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরও বাড়িয়েছে ফিনল্যান্ড।
ইউরোপের দেশগুলোতে করোনায় মৃত্যুহার কিছুটা কমতে থাকলেও ফের মৃত্যু বেড়েছে স্পেন ও ফ্রান্সে। তিন মাস পর মৃত্যুহীন একটি দিন পেল চীন। সোমবার দেশটির মূল ভ‚খণ্ডে কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানায় জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন।
বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার রাত ৭টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৭৬ হাজারের বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন অন্তত তিন লাখের কাছাকাছি মানুষ।
দু’দিন ধরে মৃত্যুহার কমতে থাকা ইউরোপের দেশ স্পেনে এদিন মৃত্যের সংখ্যা ফের বেড়েছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ৭৪৩ জন। আগের দিন মৃত্যু হয়েছিল ৬৩৭ জনের। দেশটিতে মোট মৃত্যু ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত ১ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি। ফ্রান্সেও প্রাণহানি বেড়েছে। একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখল দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে মারা গেছেন ৮৩৩ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু ৯ হাজার ছুঁইছুঁই, আক্রান্ত ৯৮ হাজারের বেশি। ইতালিতে ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ৬৩৬ জন। দেশটিতে মোট মৃত্যু ১৬ হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ১ হাজার ২৫৫ জন। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যু ১১ হাজার ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত ৩ লাখ ৬৭ হাজারের বেশি। প্রথমে পাত্তা না দিলেও এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। ক্রমাগত বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এখন পর্যন্ত শুধু নিউইয়র্কেই মারা গেছেন ৪ হাজার ৭৫৮ জন। এ কারণে নিউইয়র্কে লকডাউনের সময়সীমা ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ভারতে এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৭৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর প্রাণ গেছে ১৩৬ জনের। পাকিস্তানে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৫৩ জন মারা গেছেন।
করোনা আক্রান্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার রাতে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। তাকে সমর্থন ও দ্রুত সুস্থ হওয়ার আশা জানিয়ে বার্তা পঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনসহ বিশ্ব নেতারা। ট্রাম্প বলেন, ‘বরিস একজন দুর্দান্ত শক্তিশালী স্মার্ট লোক। তিনি তার দেশের জন্য লড়ছেন।’
ফিলিপাইনে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ল : ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে দেশটির আংশিক লকডাউন ১২ এপ্রিল থেকে আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। ১৭ মার্চ থেকে চলা এ লকডাউনে দেশটির সবচেয়ে বড় দ্বীপ লুজনের প্রায় ৫৭ মিলিয়ন মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ইসরাইলে লকডাউন : দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার থেকেই সারা দেশে লকডাউন শুরু হয়েছে। আর তা শেষ হবে আগামী শুক্রবার। ইহুদিদের বার্ষিক পাসওভার উপলক্ষে ছুটির দিনগুলোতে অনেক মানুষের সমাগম ঘটে। এ কারণেই এই উৎসবের কয়েকদিনে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেন নেতানিয়াহু। করোনার বিস্তার ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।
আপনার মতামত লিখুন