দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেটের নিকট জনগন জিম্মি হয়ে পড়েছে : সুজন

২৪ ঘণ্টা ডট নিউজ ::: দ্রব্যমূল্য সিন্ডিকেটের নিকট জনগন জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি গতকাল শনিবার (১৮ই এপ্রিল) রাত ৯টায় উত্তর কাট্টলীস্থ নিজ বাসভবনে তার ফেসবুক পেইজে লাইভে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীদের সাথে আলাপচারিতায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
এ সময় নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের মহাদুর্যোগে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে খেটে খাওয়া, হতদরিদ্র ও ভাসমান মানুষজন। এদের কথা মাথায় রেখে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বিনামূল্যে ঘর, ছয় মাসের খাদ্য এবং নগদ অর্থ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দামও জনগনের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্যও নানামূখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের এতোসব উদ্যোগের মধ্যেও সংকটাপন্ন এই মূহুর্তে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের এহেন অব্যসায়ীসুলভ আচরনের কারণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি আসন্ন রমজানের চাহিদাকে পূরণ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে প্রচুর পরিমাণে পণ্য এসেছে। ছোলা, পেঁয়াজ, তেল, চিনি, খেজুরসহ প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী খালাস হচ্ছে। বিভিন্ন পণ্য বোঝাই আরো বেশ কয়েকটি জাহাজ কয়েকদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছাবে। তারপরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা অনৈতিকভাবে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে জনগনের পকেট থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের এহেন আচরনের ফলে জনগন এই দুঃসময়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। অসাধু ব্যবসায়ীদের এমন অপতৎপরতা রাষ্ট্রকে জিম্মি করার সমতুল্য। কতিপয় সুযোগ সন্ধানী ব্যবসায়ী দীর্ঘ দিন ধরে নানা অজুহাতে রাষ্ট্র ও জনগনকে জিম্মি করার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন যা প্রতিহত করতে হবে।
তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগনের হাতের নাগালে রাখার জন্য সিটি কর্পোরেশন, জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন সমন্বয়ে নিয়মিত মনিটরিং করার উদাত্ত আহবান জানান।
লাইভে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত শুভানুধ্যায়ীরা সুজনের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান। বিশেষ করে লাইভটি প্রবাসীদের সাথে মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে বলে মত প্রকাশ করেন তারা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের খবর জানতে প্রবাসীরা উদ্বিগ্ন হয়ে রয়েছে। লাইভে নগরবাসী বিভিন্ন নাগরিক দুর্ভোগের কথা সুজনকে অবহিত করেন। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের নৈরাজ্য বন্ধ, বিদ্যুতের লোড শেডিং কমিয়ে আনা, ওয়াসার পানি সরবরাহ নিয়মিত করা এবং ডেঙ্গুর উপদ্রব থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার জন্য সুজনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবসায়ীরা জনগনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন নির্দেশনাই মানছে না এসব ব্যবসায়ীরা। নিজেদের ব্যবসা বাচাতে তারা নানা ছলছাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছে। ইতিপূর্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য আইসিইউ বেড ও ভেন্টিলেটর সম্বলিত ১২টি বেসরকারি হাসপাতাল নির্বাচন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ। তারপরও আইসিইউ সুবিধা না পেয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুই রোগী ইতিমধ্যে মারা গেছেন। যা জনগনের স্বাস্থ্য সেবার সাথে চরম প্রতারণার সামিল। এসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পিছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে চট্টগ্রামের মানুষ তা জানতে চায়। করোনা দূর্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্টান মানবতার ঢালি নিয়ে এগিয়ে এলেও এক্ষেত্রে পুরোপুরি উল্টো এসব স্বাস্থ্য সেবা ব্যবসায়ীরা। অথচ বছরের পর বছর তারা রোগীদের কাছ থেকে শত শত কোটি টাকা আয় করেছে। তাদের এ আয়কে প্রলম্বিত করার জন্য তারা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে থাকা হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করছে। হাসপাতালটিতে গ্যাস, বিদ্যুত এবং পানির সংযোগও নেই। এমনকি এ হাসপাতালটিকে করোনা রোগীদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য চাঁদা সংগ্রহের কাজও করছে ঐসব স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীরা। অথচ স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকায় থাকা হাসপাতালগুলো এগিয়ে এলে তাদের হাসপাতালেরই আইসিইউ সুযোগ সুবিধা পেতো আক্রান্ত রোগীরা। কিন্তু কি কারণে তারা ওয়াদা দিয়েও পিছু হটেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। যেখানে বিশ্বের নামী দামী হাসপাতালগুলো তাদের চিকিৎসা সরঞ্জাম, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়ে দিনরাত মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামে হলি ক্রিসেন্টের মতো একটি পরিত্যক্ত হাসপাতালে কোনভাবেই করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা হতে পারে না বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি টিসিবি’র ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে এর পরিধি আরো বিস্তৃতি করার আহবান জানান।
তাছাড়া টিসিবি’র চলমান পণ্য বিক্রির কার্যক্রম শুধু মূল সড়কেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে মত প্রকাশ করে টিসিবি’র পণ্য সামগ্রীর গাড়ীগুলো যদি মূল সড়ক বাদ দিয়ে নগরীর বিভিন্ন অলি গলি কিংবা পাড়া মহল্লায় অবস্থান করে তাতে করে প্রকৃত অর্থেই জনগনের কাছে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির সরকারী যে উদ্দেশ্য তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি সরকারের নানাপ্রকার উদ্যোগের মাঝেও ত্রাণ নিয়ে হঠাৎ করে অসন্তোষ সৃষ্টির পিছনে তৃতীয় কোন পক্ষের উস্কানি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্যও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানান।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিনা মোতাবেক ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে দল মত নির্বিশেষে প্রকৃত অসহায়দের নিকট ত্রাণ সামগ্রী পৌছে দেওয়ার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সকলের প্রতি বিশেষভাবে আহবান জানান।
এছাড়া গার্মেন্টসসহ যে সকল শিল্প প্রতিষ্টান এখনো শ্রমিক কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন প্রদান করেন নাই তাদেরকে অতিসত্বর বেতন ভাতা পরিশোধ করারও উদাত্ত আহবান জানান তিনি।
তাছাড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত যে সব প্রবাসীরা বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে খাদ্য এবং আর্থিক সংকটে ভুগছেন তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর নিকট বিনীত অনুরোধ জানান জনাব সুজন। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের সহযোগিতায় যে সকল ধণাঢ্য প্রবাসীরা এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি। এর পাশাপশি ইউরোপসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে সকল প্রবাসীরা এ রকম মানবেতর সমস্যায় আছে তাদের প্রতিও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার জন্য ধণাঢ্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
তিনি নগরবাসীকে একান্তই জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরে বাহিরে না যাওয়ার করজোড়ে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে একমাত্র প্রতিষেধকই হচ্ছে ঘরে থাকা এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান এ যুদ্ধে আমাদের জয়লাভ করতে হবে এবং অবশ্যই আমরা জয়লাভ করবো যদি না আমরা একটু ধৈর্য্য ধরে সবাই ঘরে থাকতে পারি।
তিনি প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ঘরে থাকার নির্দেশনা বাস্তবায়নে নগরীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে বিদ্যুতের প্রধান প্রকৌশলী এবং ওয়াসার পানির সরবরাহ নিয়মিত রাখার জন্য ওয়াসার এমডি’র নিকট সবিনয় অনুরোধ জানান।
লাইভের শেষ পর্যায়ে দেশে ও প্রবাসে যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা অসুস্থ অবস্থায় আছেন তাদের রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল ও মোনাজাত কামনা করেন। দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত হাজার হাজার শুভানুধ্যায়ী ফেসবুক লাইভে এ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করেন। মোনাজাত পরিচালনা করেন খোরশেদ আলম সুজন।
আপনার মতামত লিখুন