স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত পেলেই করোনা রোগীদের সেবা শুরু হবে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে-মেয়র

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত নগরীর জাকির হোসেন রোডের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সাথে সংশ্লিষ্টদের দফায় দফায় বৈঠকে অবসান হতে চলেছে জটিলতা। চিকিৎসক-নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন সকলেই।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে চসিক নগরভবনে এ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রাইভেট ক্লিনিক মালিকদের সংগঠন ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম মেডিকলেজ হাসপাতাল, বিএমএ চট্টগ্রাম, জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন এর সাথে বৈঠকে বসেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এই হাসপাতালটির জনবল নিয়োগ ও পরিচালনার নিয়মাবলীর বিষয়ে বিভিন্ন কথা উঠে এসেছে বৈঠকে।
আজকের বৈঠকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একটি ইউনিট হিসেবে এই হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালে প্রস্তুতকৃত করোনা হাসপাতালটি পরিচালিত হবে বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
এছাড়া চমেক হাসাপাতাল এবং সরকারি হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মী দিয়েই পরিচালিত হবে এই হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল। এই হাসপাতালে থাকছে ভেন্টিলেটর সুবিধা সহ ১০ শয্যার আইসিইউ। বৈঠকে এটি পরিচালনা করতে গেলে মাসে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যা সরকারের অনুদান ছাড়া সম্ভব নয়। তাই আজ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে এই বিষয়ে তড়িত নির্দেশনার জন্য গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণারয়ের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বৈঠকে একমত পোষন করেন। মন্ত্রণালয় থেকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসলে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই করোনা সেবা প্রদানে চালু করা সম্ভব হবে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালটি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.সামসুদ্দোহা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রি.জেনারেল হুমায়ুন কবির, ডিজিএফআই চট্টগ্রামের পরিচালক ব্রি.জেনারেল কবীর আহাম্মদ, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাক্তার হাসান শাহরিয়ার কবির, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষ্য প্রফেসর ডা. শামীম হাসান, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক কামাল হোসেন, সিভিল সার্জন ডাক্তার শেখ ফজলে রাব্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার অসীম কুমার নাথ, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, বিএম,এ চট্টগ্রাম এর সভাপতি মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ফয়সল ইকবাল চৌধুরী, ডাক্তার লিয়াকত আলী খাঁন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বুদ্ধ পূর্নীমায় সিটি মেয়রের বাণী
আগামীকাল বুদ্ধ পূর্ণীমা, বুদ্ধ ধর্মালল্বীদের সবাইকে মহামানব গৌতম বুদ্ধের সেই অহিংসার মৈত্রীময় শুভেচ্ছা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন।
আজ এক বাণীতে সিটি মেয়র বলেন, মহামানব গৌতম বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজরিত জম্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরির্বান । এই বৈশাখী বা বুদ্ধ পূর্ণীমা আগামি কাল সারাবিশ্বে পালন করা হবে । তাই বুদ্ধের সেই অহিংসা বাণী ছড়িয়ে অশান্ত বিশ্বে সবার জীবনে বয়ে আনুক শান্তি,দূরীভুত হোক বৈশ্বিক মহামারি। জগতের সকল প্রানী সুখী হোক।
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১০৯তম
জন্মদিনে সিটি মেয়রের শ্রদ্ধা নিবেদন
অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধে নামা, দেশ মাতৃকার জন্য আত্মাহুতি দেওয়া বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১০৯তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন।
বীরকন্যা প্রীতিলতার বর্নাঢ্য জীবনাচরণ স্মরণ করে আজ এক বিবৃতিতে সিটি মেয়র বলেন, তখনকার সমাজে পিছিয়ে পড়া নারীদেরকে অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করার অগ্রদূত ছিলেন বীরকন্যা প্রীতিলতা। বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন অন্যতম বাঙালী নারী বিপ্লবী। তৎকালীন সময়ে এই নারী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার ও মা প্রতিভাদেবী। প্রীতিলতা ডা. খাস্তগীর উচ্চ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯২৭ সালে প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করে ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। কলেজের ছাত্রীনিবাসে থাকাকালীন সময় তিনি বিপ্লবী লীলা নাগের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘দীপালি সংঘ’ সংগঠনটির সংস্পর্শে আসেন। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রামে গিয়ে বোমার খোলগুলো পৌঁছে দেন বিপ্লবীদের হাতে। এরপর প্রীতিলতা প্রকাশ্য বিপ্লবী কাজে যুক্ত হন। কলকাতার বিপ্লবী চক্রের সকল প্রকার প্রশিক্ষণ তিনি দিতেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মহানায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম দখল হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন অচল হয়ে যায়। টেলিগ্রাফ-টেলিফোন বিকল, সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, রিজার্ভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। সেসময় প্রীতিলতা কলকাতায় ছিলেন। বিএ পরীক্ষা শেষে মাস্টারদার নির্দেশে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে যান তিনি। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মহানায়ক সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম দখল হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসন অচল হয়ে যায়। টেলিগ্রাফ-টেলিফোন বিকল, সরকারি অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, রিজার্ভ পুলিশ ছত্রভঙ্গ ও রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়। সেসময় প্রীতিলতা কলকাতায় ছিলেন। বিএ পরীক্ষা শেষে মাস্টারদার নির্দেশে স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে যান তিনি। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রাম অপর্ণাচরণ ইংরেজি বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ওই একই বছরের মে মাসে প্রীতিলতার জন্মস্থান ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে মাস্টারদা তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেন। এই বৈঠক চলার সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের সাথে বিপ্লবীদের বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে প্রাণ দেন নির্মল সেন ও অপূর্ব সেন। সূর্যসেন প্রীতিলতাকে নিয়ে বাড়ির পাশে ডোবার পানিতে ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। সাবিত্রী দেবীর বাড়িটি পুলিশ পুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার প্রীতিলতাকে সন্দেহ করতে শুরু করলে মাস্টারদার নির্দেশে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। অন্য একটি বিপ্লবী গ্রুপ ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে ব্যর্থ হলে প্রীতিলতার ওপর দায়িত্ব দেয়া হয় ক্লাবটি আক্রমণের। ১৯৩২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে এক গোপন বৈঠকে মাস্টারদার নির্দেশে প্রীতিলতা ও কল্পনা দত্ত ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের পরিকল্পনা করার জন্য একটি গ্রামের উদ্দেশ্যে পুরুষের বেশে রওনা দেন। কিন্তু পথে পাহাড়তলীতে কল্পনা দত্ত ধরা পড়েন। প্রীতিলতা নিরাপদে নির্দিষ্ট গ্রামে এসে পৌঁছেন। এখানেই প্রীতিলতার নেতৃত্বে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য কাট্টলীর সাগরতীরে প্রীতিলতা ও তার সাথীদের অস্ত্র শিক্ষা শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে বীরকন্যা প্রীতিলতার নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেস্বর রাতে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করে সফল হন। আক্রমণ শেষে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। এ অবস্থায় ধরা পড়ার আগে সঙ্গে রাখা সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহত্যা করেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি মায়ের কাছে চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘মাগো, অমন করে কেঁদো না! আমি যে সত্যের জন্য, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিতে এসেছি, তুমি কি তাতে আনন্দ পাও না? কী করব মা? দেশ যে পরাধীন! দেশবাসী বিদেশির অত্যাচারে জর্জরিত! দেশমাতৃকা যে শৃঙ্খলভাবে অবনতা, লাঞ্ছিতা, অবমানিতা! তুমি কি সবই নীরবে সহ্য করবে মা? একটি সন্তানকেও কি তুমি মুক্তির জন্য উত্সর্গ করতে পারবে না? তুমি কি কেবলই কাঁদবে?’ শুধু তার মা নয়, আজও অসাধারণ সাহসী সেই নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারকে অশ্রুুসজল চোখে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন দেশপ্রেমী বাঙালি।
সিটি মেয়র বীরকন্যা প্রীতিলতার ১০৯তম জন্মদিনে তাঁর আত্মার সদগতি জানিয়ে আরো বলেন, আজ বৈশ্বিক মহামারির কারণে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হচ্ছে না বিধায় লেখনিতে তাঁর প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তিনি আমাদের জন্য আজীবন বিপ্লবী চেতনার ধারক হয়ে থাকবেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
আপনার মতামত লিখুন