বণিকতন্ত্রের নিকট মানবতন্ত্র অসহায় হয়ে পড়েছে : খোরশেদ আলম সুজন

বণিকতন্ত্রের নিকট মানবতন্ত্র অসহায় হয়ে পড়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি গতকাল সোমবার (৪ মে) রাত ১০টায় উত্তর কাট্টলীস্থ নিজ বাসভবনে তার ফেসবুক পেইজে লাইভে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত নেতা-কর্মী, সমর্থক এবং শুভানুধ্যায়ীদের সাথে আলাপচারিতায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
এ সময় নাগরিক উদ্যোগের প্রধান উপদেষ্টা সুজন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তিনি এ ভাইরাস মোকাবিলাকে যুদ্ধ জয়ের মতো উল্লেখ করে জনগনকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছেন। এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের মহাদূর্যোগ থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করছেন। জনগনের ঘরে থাকার সুবিধার্থে গত ২৬শে মার্চ থেকে ধারাবাহিকভাবে টানা সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সরকারের এতোসব কার্যকরী উদ্যোগকে বাঁধাগ্রস্ত করছে এক শ্রেণীর বণিকতন্ত্র। যারা ছলে বলে কৌশলে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে শুরু করেছে। তাদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে অর্থটাই মূখ্য। তাই তারা সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজেদের ইচ্ছেমতো তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। তারা সরকারকে জিম্মি করে তাদের অসৎ ফায়দা হাসিলে সদা তৎপর রয়েছে। এতে করে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। মানুষের জীবন রক্ষা আজ বানিজ্যিকরণের কাছে বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। এসব বণিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উদাত্ত আহবান জানান তিনি।
লাইভে নগরবাসী বিভিন্ন দুর্ভোগের কথা সুজনকে অবহিত করেন। বেশীরভাগ নগরবাসীই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা, বেসরকারি হাসপাতালের নৈরাজ্য বন্ধ, ওয়াসার অনিয়মিত পানি সরবরাহ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম বৃদ্ধি এবং নগরজুড়ে মশার উৎপাত বন্ধ করাসহ বিভিন্ন জনদুর্ভোগ নিরসনে সুজনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো এখনো জনগনের চিকিৎসায় কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। তাদের গাফিলতির কারণে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে সাধারণ অসুস্থ রোগী। অথচ নূন্যতম সেবা পেলে এসব রোগীদের জীবন বাঁচানো কোন কঠিন বিষয় ছিলো না। তিনি বেসরকারি হাসপাতালের মালিকদের জনগনের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি না খেলার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান।
এছাড়া হলি ক্রিসেন্টের মতো একটি পরিত্যক্ত হাসপাতালকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করছি, করবো বলে সময়ক্ষেপণ করছে যা জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে উল্লেখ করে অতিসত্বর তা দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান।
এছাড়া করোনা চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেটর, কিট এবং ঔষধপত্রসহ অন্যান্য চিকিৎসা সরঞ্জামও বৃদ্ধি করার বিশেষ আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, আমরা বারবার ওয়াসার এমডি’র নিকট অনুরোধ জানিয়েছি যে নগরীর যে সমস্ত এলাকায় ওয়াসার পানির সরবরাহ স্বাভাবিক নয় সে সব এলাকায় রেশনিংয়ের মাধ্যমে হলেও ওয়াসার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা। কারণ সরকারি নির্দেশনা হচ্ছে জনগনকে ঘরে থাকা। সেই নির্দেশনা পালন করতে হলে অবশ্যই ব্যবহার্য পানির ব্যবস্থাও করতে হবে ওয়াসাকে। তাছাড়া রমজান মাসে গৃহস্থালি কাজে পানির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কম হলেও গ্রাহকগণ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি যে কোন মূল্যে ওয়াসার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদাত্ত আহবান জানান এবং যে সকল এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে সে সকল এলাকায় ভাউচারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ প্রদানের আহবান জানান। নচেৎ নৈতিক দায়িত্ব পালনে বর্তমান পরিস্থিতিতেও ওয়াসা অফিসে অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারন করেন সুজন।
করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান এবং ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে আগামী ১০ মে থেকে দোকান পাট ও শপিংমলগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত দোকান পাট ও শপিংমল খোলা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। তিনি শপিংমল এবং দোকান পাটে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার উদাত্ত আহবান জানান। এছাড়া শপিংমলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখার অনুরোধ জানান। এছাড়া উপরোক্ত নির্দেশাবলী যারা অমান্য করবেন তাদের জরিমানা সহ শাস্তি প্রদানের জন্য প্রশাসনের নিকট বিনীত আহবান জানান।
তিনি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীকে অনলাইনে গ্যাসের বিল জমা নেওয়ার জন্য উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন দেখা যাচ্ছে যে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা পালন করতে গিয়ে একজন গ্রাহকের বিল জমা নিতে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে করে গ্রাহকগণ ভোগান্তিতে পড়ছে। তাছাড়া রমজান মাসে এভাবে লাইনে দাড়িয়ে থাকতে গিয়ে অনেক গ্রাহক অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। যদি কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর অনলাইনে বিল নেওয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকে সে ক্ষেত্রে সাধারন ছুটি শেষ হওয়ার পর গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল জমা নেওয়ার জন্য কেজিডিসিএল এর এমডি’র হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
তিনি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিঃস্বার্থভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে টাকার যোগান দেওয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের প্রতি নজর দেওয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বর্তমান লক ডাউন অবস্থায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ মূহুর্তে তাদের পাশে দাড়ানো সরকারের একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ প্রবাসীরা স্ব-উদ্যোগে জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। তাদের এ অবদানের পিছনে কারো কোন সাহায্য নেই। একজন প্রবাসী তার পরিবারের জমানো উপার্জন দিয়ে বিদেশে গিয়ে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাই প্রবাসীসহ তাদের পরিবার পরিজন যারা দেশে অবস্থান করছেন তাদের তালিকা করে তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট বিনীত অনুরোধ জানান সুজন।
তিনি আরো বলেন বর্ষা মৌসুম একেবারেই সন্নিকটে। মানুষের মনে অজানা শংকা এবং ভয় কাজ করছে কখন বৃষ্টি এসে ঘরবাড়ি কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হানা দেয়। বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্টান নগরীতে জলাবদ্ধতা নিরসণে কাজ করছে। এ কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন খাল কিংবা নালাতে বাঁধ দেওয়া হয়েছে ফলতঃ পানির স্বাভাবিক গতি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে খাল, নালাগুলো ভরাট হয়ে গিয়েছে। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে যা মারাত্মক রূপ ধারণ করতে পারে। অতিসত্বর এসব খাল এবং নালাগুলোর মুখ উন্মুক্ত করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ সৃষ্টি করতে না পারলে জনগনকে এর চরম ফল ভোগ করতে হবে। তাই জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সাথে জড়িত সকল সংস্থাকে অতিসত্বর খাল এবং নালার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনার উদাত্ত আহবান জানান তিনি।
এছাড়া মশার উৎপাত থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করার জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান সুজন।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের পাশাপশি জনগনের সামনে উঁকি দিচ্ছে প্রাণঘাতী ব্যাধি ডেঙ্গু। গত বছরও ডেঙ্গুর কারণে আমরা অনেককেই অকালে হারিয়েছি যা কখনোই কারো কাম্য নয়। তাছাড়া নগরবাসীর ঘরে থাকার পথে অন্যতম অন্তরায় হচ্ছে মশা। তাই মশা নিধনকে বর্তমান সময়ে অধিকতর গুরুত্ব দানের জন্যও চসিক মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
আপনার মতামত লিখুন