শুদ্ধি অভিযান চলবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

যেখানে অনিয়ম-দুর্নীতি পাওয়া যাবে সেখানেই শুদ্ধি অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদে জড়াতে সাহস না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার এগিয়ে চলছে’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই অভিযান কন্টিনিউ (অব্যাহত) করতেই হবে। আমি শুদ্ধি অভিযান বলব না, আমি বলব দুর্নীতির বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান। দুর্নীতিবাজ, দখলবাজরা দুর্নীতি, দখলের চিন্তা যতদিন করবে; ততদিন এই অভিযান চলবে
সহযোগী সংগঠন যুবলীগের নেতাদের চাঁদাবাজি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অসন্তোষ প্রকাশ পাওয়ার পর জুয়ার আখড়া বন্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান শুরু হয়।
দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন-যেখানে কোনো অসঙ্গতি দেখেছেন, সেটা কে বা কার দল বা কাদের দল সেটা তিনি দেখেননি। অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। দেশের দুর্নীতি বন্ধে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রী কতগুলি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদ দমন করেছেন। তিনি দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান। যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়তে দুর্নীতি সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। যাতে কেউ ভবিষ্যতে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদে জড়াতে সাহস না পায়।’
আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘যেখানেই অনিয়ম হবে, দুর্নীতি হবে, আইন অমান্য হবে সেখানেই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা কোনো এলাকা কিংবা বিষয়কে টার্গেট করছি না।’
‘আপনারা দেখছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী টেন্ডারবাজি, অনিয়মকারী কাউকে ছাড় দিচ্ছেন না। আমরা অবশ্যই টেন্ডারবাজ, দুর্নীতিবাজ এবং অনিয়মকারীদের কন্ট্রোলে নিয়ে আসব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস তিনি দূর করবেন। তিনি কিন্তু তাই করেছেন। দেশের মানুষ এখন জঙ্গিবাদকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না। তাই জনগণকে সঙ্গে নিয়েই জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ কে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘এখন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। আমরা সেটি বাস্তবায়নে কাজ করছি। তাই আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান রাখব তারা যেন এই কাজটি (মাদক গ্রহণ) না করে। আমরা চাইনা আমাদের নতুন প্রজন্ম একটি ভুলের মধ্য দিয়ে হারিয়ে না যায়। আমরা চাই আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি সেটি যেন তরুণ প্রজন্ম বাস্তবায়ন করতে পারে।’
সুশাসনের কারণে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ আমরা যখন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারের ক্ষমতায় আসি তখন দেশে পূজামণ্ডপ ছিল ৯ হাজার বা ১০ হাজারের মতো। বর্তমানে সে সংখ্যা ৩২ হাজারের কাছাকাছি। শুধু পূজামণ্ডপ নয়, দেশে এমন কোনো জেলা নাই যেখানে বৌদ্ধ ধর্মের কোনো প্যাগোডা নেই। ঠিক সেভাবেই সব ধর্মের প্রতিনিধিরা নির্বিঘ্নে এ বাংলাদেশে থাকছেন। কে মুসলিম, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রিষ্টান, কে পাহাড়ি, কে নৃ-গোষ্ঠী আমরা তা দেখছি না। আমাদের কাছে সবাই বাঙ্গালি। সবাই মিলেমিশে দেশকে এগিয়ে নিতে চাই।’
দ্রুত আবরার হত্যার চার্জশিট
অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর হাতে নিহত বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আবরার হত্যার চার্জশিট দ্রুত দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবরার হত্যার ঘটনা দুঃখজনক। এই ঘটনায় আমরা বিস্মিত। এই হত্যার চার্জশিট অতি দ্রুত সময়ে প্রস্তুতের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘আবরার হত্যার ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। মেধাবী ছাত্র না হলে বুয়েটে কেউ চান্স পায় না। সেই মেধাবী ছাত্রগুলো এভাবে খুন করল। তাদের মত মেধাবীদের মস্তিষ্ক এতটা বিকৃত হবে এটা আমাদের ধারণাই ছিল না। আমরা সত্যিই দুঃখিত। তবে আমরা শুধু দুঃখ প্রকাশ করে থেমে থাকেনি। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সেই অপরাধীদের ধরেছি। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছি এ ঘটনায় অতিদ্রুত যাতে নির্ভুল একটা চার্জশিট প্রস্তুত করা হয় এবং অতিদ্রুত যেন এ ঘটনায় ন্যায্যবিচার পায় আমরা সে আশা করছি। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন