নগরী অন্ধকারে ডুবে থাকে না এটাই আমার বড় অর্জন : মেয়র নাছির

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বরেছেন, নগরবাসী প্রদত্ত রায়ে মেয়র পদে দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সকলের সমন্বিত উদ্যোগে নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ করার চেষ্টা করেছি। আমাকে নগরবাসী ৫ বছরের জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে আমার দেয়া অঙ্গীকার ও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে আমি সচেষ্ট থেকেছি। নাগরিক সেবাবৃদ্ধিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নাগরিক প্রত্যাশা পূরণের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি। এই নগরী অন্ধকারে ডুবে থাকে না এটাই আমার বড় অর্জন।
মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদারগণের প্রায় ১৮১ কোটি টাকা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ প্রায় ৩শ কোটি টাকার দায়-দেনার ভার কাঁধে নিয়ে আমি দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ধীরে ধীরে এই সংকট কাটিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে স্বাবলম্বী করেছি। আমি বিশ্বাস করি স্বদিচ্ছা থাকলে কঠিনকে জয় করা কোনো কঠিন কাজ নয়।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনায়ন ও অনিয়ম দূর করার শতভাগ সফল হওয়ার লক্ষ্যেই আমি কাজ করেছি। কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বছরে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা ভূর্তুকি দেয়াসহ এ দু’টি বিভাগকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও নগরবাসীর প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিচ্ছন্নতা, উন্নয়ন, আলোকায়নের সাথে সাথে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের পরিকল্পিত উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি।
নগরীর পরিবেশ উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরীর স্বার্থে রাতে আবর্জনা অপসারণ, নগরীর প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়কে দৃষ্টিনন্দন ও সবুজায়ন এবং বিলবোর্ডমুক্ত নগরী উপহার দিয়েছি।
মেয়র আক্ষেপ করে বলেন, বর্তমান চলমান সংকট করোনার কারণে সারা দেশের মত নগরীর উন্নয়নকাজে ধীরগতি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রামকে নান্দনিক, গ্রীন ও ক্লিন সিটিতে উন্নীত করণের যে প্রয়াস আমি হাতে নিয়েছি তা পরবর্তী নেতৃত্ব অব্যাহত রাখবে।
আজ সকালে আন্দরকিল্লাস্থ চসিক পুরাতন নগরভবনের কেবি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে চসিক বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সাথে সমন্বয় সভায় মেয়র এসব কথা বলেন।
এসময় মেয়র করোনাকালীন দু:সময়ে চসিকের বিদ্যুৎ কর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় আলোকায়নের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আপনাদের দুরদর্শী কর্মক্ষমতায় এহেন সংকটকালীন সময়েও চসিকের সড়ক বাতি সচল ছিল। বর্তমানে ভারী বর্ষায়ও জনগণ স্বাচ্ছন্দে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারছে। প্রধান প্রধান সড়ক ও অলি-গলিতে আলোকায়ন এখন চসিকের অন্যতম সেবা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামীতেও এমন কর্মদক্ষতা অব্যাহত রাখার জন্য মেয়র তাদের প্রতি আহবান জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত কর্মচারীদের হাতে চসিকের পরিচয় পত্র ও মুখে পরার মাস্ক তুলে দিয়ে সিটি মেয়র বলেন, ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে চসিকের বিদ্যুৎ লাইন হতে অসাধু একটি চক্র অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে এর অপব্যবহার করছে। এই বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সতর্ক থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। চসিকের বিদ্যুৎকর্মীরা যাতে কোন ধরনের সমস্যায় না পরে সেজন্য চসিক প্রদত্ত পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক সাথে রাখার নির্দেশনাও দেন সিটি মেয়র।
উল্লেখ্য যে, ১৯৯৪ সালের আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৮টি ওয়ার্ড এলাকায় সড়ক বাতির ব্যবস্থা ছিল। পরবর্তীতে ৪১টি ওয়ার্ড এলাকায় আলো সেবা প্রদান কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে সম্প্রসারিত হয়। যার সংখ্যা বর্তমানে সোডিয়াম ও এলইডি বাতিসহ ৫১ হাজার ৫ শত ৭৩টি।
সমন্বয় সভায় মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কান্তি দাশ, সহকারী প্রকৌশলী রেজাউল বারী, আনোয়ারুল হক চৌধুরী,সালমা বেগম, সিবিএ’র জাহেদুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শনে সিটি মেয়র
নগরীর হালিশহরস্থ আল মানাহিল নার্চার জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন। পরিদর্শনকালে মেয়র বলেন,করোনাকালে সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারী সামাজিক উদ্যোগ প্রকৃত অর্থেই নি:স্বার্থ মানবিক সেবামূলক প্রয়াস। আলমানাহিল নাচার জেনারেল হাসপাতাল করোনা আক্রান্তদের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট যে চিকিৎসা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তা সংকট উত্তরণের পাথেয় থাকবে। এই হাসপাতালটিতে ১২টি আইসিইউসহ রয়েছে ফ্রি অক্সিজেন সার্পোট ব্যবস্থা। এ হাসপাতালে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
এসময় কাউন্সিলর মোহাম্মদ আবুল হাশেম, মোহাম্মদ হোসেন হিরন, আল মানহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর চেয়াম্যান হেলাল উদ্দিন জমির উদ্দিন, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক ফরিদ উদ্দিন জমির উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান হাফেজ শিহাব উদ্দিন জমির উদ্দিন, হাসপাতালের পরিচালক এ ইউ এম সেলিম উল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ ও পরিচালক শরীফ উদ্দিন জমির উদ্দিন প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
কমল মহাজন হাট অস্থায়ী পশুর বাজার পরিদর্শন ঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন পতেঙ্গায় কমল মহাজন হাট অস্থায়ী পশুর বাজার পরিদর্শনকালে বলেন, এবার ঈদ-উল আযহার কেরবানীর পশু বাজারে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বেচা-কেনার পর্বটি সম্পাদন করতে হবে। কারণ পরিস্থিতি বুঝে আমাদেরকে সঠিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে অযথা সময় ক্ষেপন না করে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
এসময় মেয়র বাজার ইজারাদার ও পশু বিক্রেতাদের নিরাপদ দূরত্ব বজিয়ে রেখে পশু বেচা কেনার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নির্দ্দিষ্ট সীমার বাইরে যাতে কোন প্রকার পশু বেচা-কেনা না হয়। এর ব্যত্যয় ঘটলে সিটি কর্পোরেশন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনায় নামবেন।
তিনি প্রধান সড়ক হতে কমপক্ষে ১শ গজ দূরত্বে পশু বাজার পরিচালনার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
বাজার পরিদর্শনকালে কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরন, চসিক প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মুফিদুল আলম, মেয়রের একান্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল হাশেম ও বাজার ইজারাদারগণ উপস্থিত ছিলেন।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
আপনার মতামত লিখুন