জৌলুস হারিয়েছে রাউজানের রামধন জমিদার বাড়ি

প্রাচীন কারুকার্য্যমন্ডিত সু-পরিসর ভবন। পলেস্তারা উঠে শ্যাওলা জমেছে ভবনটির অনেক স্থানে। পুকুর, রামধর দিঘী, বাড়ীর সামনে তোরণ, চুন সরকি দিয়ে তৈরি কাচারিঘর, জমিদারের আনন্দ মহল, নাচখানা, মন্দির সবই আছে।
বাড়িটির পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় বাড়ির ভেতর থেকে সন্ধ্যাকালীন সময়ে নুপুরের আওয়াজ ভেসে আসেনা এখন। এক সমসয়ের কর্মচাঞ্চল্যে ভরা বাড়িটির জৌলুস হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। তবু ঐতিহ্য ধরে রেখে কালের স্বাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে রাউজানের ডাবুয়া এলাকার রামধন জমিদার বাড়ীর ঝরাজীর্ণ ভবনটি। রাউজানে ঐতিহ্যবাহী এই ভবনটি জুড়েই আছে সুনশান নীরবতা।
ব্রিটিশ শাসনামলে এই বাড়িটির আধিপত্য ছিল এলাকাজুড়ে। এলাকার জমিদারি ছিল রামধন জমিদারের হাতেই। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানান শ্রেণী, পেশার মানুষের আনাগোনা লেগেই থাকত বাড়িটিতে। কালের আবর্তে সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে অতীতের হিমাগারে।
জমিদার রামধর ও রামগতি ধরের বংশ ধরের মধ্যে অনেকেই চট্টগ্রাম শহর ও ঢাকায় বসবাস করলেও জমিদার বাড়ীটির কিছু অংশ সংস্কার করে রামধরের নাতি-নাতনীসহ কয়েকজন এখনো বসবাস করেন এই বাড়িটিতে। পূজার সময় কিংবা পরিবারিক অনুষ্ঠানে একত্রিত হন জমিদারের পরিবারবর্গ।

বার্ধক্যের ছাপ ধানা বেধেছে শরীরে। সেদিনগুলোর কথা ভেবে এখনো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন রামধন জমিদারের নাতনী একাশি বছরের বৃদ্ধা ছবি ধর। কান্না বিজড়িত কন্ঠে তিনি ২৪ ঘন্টা ডট নিউজকে বলেন, এক সময় আমাদের এই বাড়িটি লোকে গিজগিজ করতো। আমাদের জন্মের পর থেকে দেখেছি ঠাকুর দা’র (রামধন জমিদার) জমিদারি শাসন।
তিনি মারা যাওয়ার পর বাবা কেশব চন্দ্র ধর জমিদারির হাল ধরেন। ১৯৫৫ সালের ৬ জুন বাবার মৃত্যুর পর আমাদের জমিদারি ধীরে ধীরে হারিয়ে গেল। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস।
স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জমিদার বাড়িটি রুপার থালা, বালতি, কেঁতলি ব্যবহারসহ অভিজাত শ্রেণীর ভোগবিলাসীতায় ভরপুর ছিল। এলাকার মানুষদের কাছ থেকে রুপার টাকায় খাজনা আদায় করত জমিদার। যারা খাজনা আদায় করতে আসত তাদেরকে জমিদার বাড়ি থেকে দেওয়া হতো এক জোড়া নারকেল, একবিড়া পান আর বাতাশা।
ডাবুয়া জগন্নাত হাট, ডাবুয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, চিকদাইর পুলিশ ফাড়ি সহ রাউজান আর আর এসি মডেল হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠায় এ জমিদার বংশের বিশেষ অবদান রয়েছে বলে স্বীকৃতি আছে।
আপনার মতামত লিখুন