লোহাগাড়ায় সরকারী অনুদানের তালিকায় নাম তুলতে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পূজা কমিটির বিরুদ্ধে

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় পূজা উদযাপন কমিটির বিরুদ্ধে আসন্ন শারদীয় দূর্গোৎসবের পূজামন্ডপ কমিটির কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ ওঠেছে।
সরকারী অনুদানের তালিকায় নাম তুলতে দূর্গাপূজার মন্ডপ কমিটির তালিকা জমা নেয়ার নামে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উপজেলার ৯ ইউনিয়নের একাধিক পূজামন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দের।
জানা যায়, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার খোকন কান্তি নাথ ও অর্থ সম্পাদক কাঞ্চন অাচার্য্যের নেতৃত্বে উপজেলার প্রতিটি পূজামন্ডপ কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে এ চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা না দিলে সরকারী অনুদানের তালিকা থেকে পূজামন্ডপের নাম বাদ দেয়া হবে বলেও মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দকে জানিয়ে দেয়া হয়। পশ্চিম কলাউজান মনমহাজন পাড়া সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক খোকন কান্তি নাথ বলেন, উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার খোকন কান্তি নাথ ও অর্থ সম্পাদক কাঞ্চন আচার্য্য আমার চেম্বারে এসে গত বছরের বকেয়াসহ দিতে হবে বলে ৬০০ টাকা নিয়ে গেছে। টাকা না দিলে সরকারী অনুদান প্রাপ্তির তালিকা থেকে পূজামন্ডপের নাম বাদ দেয়ার কথা বলায় আমি বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েছি।
একই ইউনিয়নের আদারচর শান্তিরাম সিকদার পাড়া সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সভাপতি উৎপল কান্তি দেব পিন্টু বলেন, মাষ্টার খোকন কান্তি নাথ আমাকে ফোন করে কমিটির তালিকা ও ৬০০ টাকা জমা দিতে বলেন। তবে আমি গত বছর উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃংখলা মিটিং এ গিয়ে জানতে পারি সরকারী অনুদানের টাকা পেতে কোন চাঁদা নেয়া হয় না। তাই আমি এখনো কমিটিও জমা দিইনি এবং টাকা দিইনি।
উপজেলার উত্তর বড়হাতিয়া রুদ্র পাড়া সর্বমঙ্গলা কালীমন্দির সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সভাপতি পরিমল রুদ্র জানান, বড়হাতিয়ার ডা: রাজিব রুদ্র পূজা পরিষদের কথা বলে অামাকে ফোন করে কমিটির তালিকার সাথে ৬০০ টাকা নিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলেন। টাকা না দিলে সরকারী অনুদানের তালিকা থেকে আমাদের পূজামন্ডপের নাম বাদ দেয়া হবে বলে জানান।
চরম্বা বিবিবিলা নাথপাড়া সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ শীল জানান, মাষ্টার লিটন বিশ্বাস আমাকে ফোন করে টাকা ও কমিটির তালিকা জমা দিতে বলেন। আমি চট্টগ্রাম শহরে থাকায় মধু দেবনাথের মাধ্যমে কমিটির তালিকা পাঠালে তাঁর কাছ থেকে ৩০০ টাকা নিয়েছে।
পুটিবিলা নাথপাড়া জাগ্রত যুব পরিষদ সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সভাপতি আশুতোষ দেবনাথ জানান, পূজা কমিটি থেকে ফোন করে গত বছরের ৩০০ টাকাসহ দুই বছরের ৬০০ টাকা নিয়ে কমিটির তালিকা জমা দিতে বলেন। তবে আমরা এখনও কমিটির তালিকা জমা দিইনি।
পূর্ব কলাউজান ধরপাড়া সার্বজনীন দূর্গাপূজা কমিটির সভাপতি সজল ধর জানান, আমাদের কমিটির অর্থ সম্পাদক রাসেল ধরকে ফোন করে ৬০০ টাকা নিয়ে তালিকা জমা দিতে বলেন। যেহেতু আমরা গত বছরও পূজা কমিটিকে চাঁদা দিইনি তাই এখনও কমিটির তালিকা জমা দেইনি।
এ অভিযোগের সত্যতা জানতে লোহাগাড়া পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার খোকন কান্তি নাথের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মন্ডপ কমিটির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদক হলেন উপজেলা কমিটির কাউন্সিলর। তাই তাদের কাছ থেকে এগুলো রশিদের মাধ্যমে বার্ষিক সদস্য চাঁদা নেয়া হচ্ছে। প্রতি ঘট পূজা ২০০ টাকা ও প্রতিমা পূজা ৩০০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চাঁদার টাকা না দিলে সরকারী অনুদানের তালিকায় পূজামন্ডপের নাম দেয়া হবে না- মন্ডপ কমিটির এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তৌছিফ আহমদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পূজামন্ডপে সরকারী অনুদান পাওয়ার জন্য পূজা কমিটি কর্তৃক চাঁদা নেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায়। চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে যথাযথভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২৪ ঘণ্টা/এম আর/আজাদ
আপনার মতামত লিখুন