চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন

লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : দেশের একমাত্র হাতির আবাসস্থল চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের সংরক্ষিত বনাঞ্চল হতে কাঠ চুরি, পাচারে সহযোগিতা, বনভূমি অবৈধ দখলে সহযোগিতা, প্রকল্প বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে অনিয়ম, বন নীতি ও বন ব্যাবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে চুনতি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম, বিট কর্মকর্তা এটিএম গোলাম কিবরিয়া ও আজহার আলিকে শাস্তি ও অপসারণের দাবীতে মানববন্ধন করেছে লোহাগাড়াবাসী।
সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় লোহাগাড়া উপজেলা সদরের বটতলী মোটর স্টেশনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক শাহেদ ফেরদৌস হিরু, সামাজিক ব্যাধি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ ইব্রাহিম খলিল, আলোকিত বাংলাদেশের আহবায়ক নুর মোহাম্মদ ও সবুজ বাংলাদেশ লোহাগাড়া শাখার আহবায়ক মুরাদুল হায়াত আল মাহাদীস প্রমুখ। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যগণসহ লোহাগাড়ার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তরা বলেন, কর্তৃপক্ষের আইন প্রয়োগে উদাসীনতা ও যথাযথ নজরদারির অভাবে সংরক্ষিত বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণী অভায়রণ্য আজ ধ্বংসের পথে। এরই মধ্যে বনাঞ্চল ধ্বংসের পাশাপাশি অনেক বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের একমাত্র বন্যহাতি ও বন্যপ্রাণীর আবাস্থল হচ্ছে চুনতি বন্যপ্রাণী অভায়রণ্য। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে চলমান প্রকল্পগুলোতে সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে বন ও প্রাণী। এসব বন উজাড় করার কারণে তীব্র খাবার সংকটে বন্যহাতি আজ লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষের ফসলসহ ঘরবাড়ি নষ্ট করছে প্রতিনিয়ত। এমনকি প্রাণও হারাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
বক্তারা আরো বলেন, জীববৈচিত্র্যের টেকসই উন্নয়ন মানবকল্যাণের জন্য অপরিহার্য। বন ও বন্যপ্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরিবেশ, প্রতিবেশ ব্যবস্থা জীববৈচিত্র্যের ওপর নেমে আসে বিপর্যয়। আর জীববৈচিত্র্যের স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হলে মানুষের অস্তিত্বের ওপরই আঘাত আসে। জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল, প্রজনন স্থল, এশিয়ার ঐতিহাসিক হাতির চারণ ক্ষেত্র ধ্বংস হওয়ার পথে।
যার ফলে অভয়রণ্যের বসবাসরত হাতি ও অন্যান্য প্রাণীরা লোকালয়ে চলে আসছে যা ভবিষ্যতে অভয়ারণ্যে শিক্ষা ও গবেষণার কাজ করার সুযোগ থাকবে না বলে জানান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যতে অভয়ারণ্য শব্দটি পরবর্তী প্রজন্ম ঐতিহ্য ও সংরক্ষণ দেখার সুযোগ থাকবে না। প্রকৃতি নষ্ট করা মানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ডেকে আনে।
এছাড়াও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, কিছুদিন আগে এই দুই কর্মকর্তার যোগসাজশে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সিপিজির সদস্য ও ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগের মাস পার হলেও কোন তদন্ত হয়নি বলে জানান তারা।
অভিযোগ দায়ের করার কিছুদিন পর থেকে রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম, বিট কর্মকর্তা আজহার আলী বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি ও মামলার ভয় দেখিয়ে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান চুনতি অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা মঞ্জুর আলম একটি বন সার্কেলে ১৪ বছরের অধিক কর্মরত আছে। যার কারণে তিনি বিট কর্মকর্তা ও স্থানীয় গাছ চোরদের সাথে সিন্ডিকেট তৈরী করে নানান অনিয়ম করে যাচ্ছেন।
তাঁরা আরো বলেন, চুনতি বিট কর্মকর্তা এটিএম গোলাম কিবরিয়া শুধু এক বিটের অধীনে চার বছরের অধিক কর্মরত আছেন। যদিও এক রেঞ্জে সর্বাধিক তিন বছররের অধিক চাকরি করার বিধান নাই যা বদলী নীতিমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে টাকার বিনিময়ে কাঠ পাচারে সহযোগিতা, পাহাড় কাটায় সহযোগিতা, পুকুর খনন ও নানা অনিয়মের অভিযোগ।
২৪ ঘণ্টা/এম আর
এ. কে. আজাদ
লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।
তারিখ : ১৪/০৯/২০২০
আপনার মতামত লিখুন