পেঁয়াজ ছাড়া রান্না করার উপায়

বাংলাদেশে এখন ২২০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পেঁয়াজের ঝাঁজে বাজার এখন অস্থির। ইতিমধ্যে সরকার পেঁয়াজের দাম কমার আশ্বাস দিলেও তার সুফল মেলেনি।
প্রতিবেশী দেশ ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। তাই এখন অনেকেই রান্নায় পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছেন।
তবে এখন প্রশ্ন হলো- পেঁয়াজ যদি চাল-ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাবার না হয়, তবে পেঁয়াজ বাদ দিয়ে কি প্রতিদিনের রান্না চলে না?
পেঁয়াজের প্রতি গৃহিণী আর রসনাবিলাসীদের এত পক্ষপাতিত্বের কারণ তার বিশেষ স্বাদ এবং গ্রেভি বা ঝোল তৈরিতে পেঁয়াজের বিশেষত্ব।
এ ছাড়া কাঁচামাংস কিংবা মাছের মধ্যে পেঁয়াজের রস ঢুকে তার স্বাদকে আরও বাড়িয়ে দেয় বলেই পেঁয়াজের এত কদর।
তবে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, বাঙালি রান্নায় সাধারণত যে উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয়, তাতে পেঁয়াজের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
পেঁয়াজের ঝাঁঝে আমজনতার ‘চোখে জল’। তাহলে উপায়? পেঁয়াজ ছাড়া রান্নাও যে মজা লাগে না! চলুন, আজ আমরা এমন কিছু টিপস পড়ি, কিভাবে নিত্যদিনের সব রান্না অল্প পেঁয়াজ দিয়ে সেরে ফেলা যায়।
আসুন জেনে নেই রান্নায় পেঁয়াজের বিকল্প কী হতে পারে-
১) আমরা অনেকেই সবজি/ভাজি/ডাল ইত্যাদি রান্না করার সময় অনেকটা পেঁয়াজ দিয়ে দিই। মনে করি এতে খাবারের স্বাদ বাড়ছে। ভুল ধারণা! বড় এক বাটি সবজি রান্নার জন্য একটি পেঁয়াজ ব্যবহার করলেই যথেষ্ট, স্বাদের কোন হেরফের হবে না। তেল গরম হলে কাঁচা মরিচের ফালি ও অল্প পেঁয়াজ কুচি দিয়ে দিন, নেড়েচেড়ে গন্ধ ছড়ালে সবজি দিয়ে দিন এবং আপনার রেগুলার রেসিপি অনুযায়ী ভাজি করুন। দেখবেন, কত্ত মজা হয়েছে।
২) অনেকেই ডাল রান্নার শুরুতে অনেকটা পেঁয়াজ একবারে দিয়ে দেন, আবার পরে পেঁয়াজ দিয়ে বাগার দেন। শুরুতে পেঁয়াজ দিলে তাতে ডালের স্বাদ কিন্তু মোটেও বাড়ে না। বরং এটা ডাল দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, ফ্রিজে রাখলেও আগের স্বাদ থাকে না। ডালে পেঁয়াজ খেতে চাইলে কেবল বাগারে পেঁয়াজ দেয়াটাই যথেষ্ট। এমনকি, পেঁয়াজ ছাড়া কেবল রসুন ও মরিচ দিয়ে বাগার দিলেও ডাল সুস্বাদু হবে।
৩) কাটা পেঁয়াজ দিয়ে রান্না করার বদলে বাটা পেঁয়াজ দিয়ে তরকারি রান্না অভ্যাস করুন। এতে অল্প পেঁয়াজেই সুন্দর তরকারি হবে।
৪) ঘন, থকথকে ঝোল খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে পাতলা ঝোলের তরকারি খেতে পারলে সবচাইতে ভালো। সেটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। আর ঘন ঝোল খেতে চাইলে পেঁয়াজ দিয়েই যে খেতে হবে, সেটা কিন্তু নয়। আপনি আলু সেদ্ধ করে মিহি করে চটকেও ব্যবহার করতে পারেন ঝোল ঘন করতে। এমনকি ভুনা তরকারিতেও দিতে পারেন। কেউ বুঝতেই পারবে না!
৫)বিভিন্ন ভর্তায়, ডিম ভাজিতে পেঁয়াজ কুচি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে মোটা মোটা করে না কেটে চিকন করে কুচি করুন। পেঁয়াজ অনেক কম লাগবে।
৬) পিঁয়াজু , ডিম ভাজি ইত্যাদি তৈরিতে পেঁয়াজের বদলে ব্যবহার করতে পারেন মুলা বা পেঁপে। হ্যাঁ, চিকণ করে মুলা বা পেঁপে ঝুরি করে, পানিতে ভালো করে ধুয়ে চিপে নিলেই ব্যবহারের জন্য একদম তৈরি। পেঁয়াজ তো কম লাগবেই, সাথে দারুণ সুস্বাদু হবে পেঁয়াজু কিংবা ডিম ভাজি।
৭) মুরগীর ঝোল তৈরিতে বেশি পেঁয়াজ পছন্দ করেন? পেঁপে দিয়ে মুরগীর তরকারি রান্না করুন, বেশি পেঁয়াজ ছাড়াই সুন্দর ঝোল হবে।
৮) দেশী পেঁয়াজের বদলে লাল স্প্যানিশ অনিয়ন ব্যবহার করুন, এতে খোসা ও অন্যান্য অংশের আবর্জনা কম হবে, দামে সাশ্রয় হবে। দেশী পেঁয়াজের ফেলনা অংশ অনেক বেশি, অন্য দিকে লাল পেঁয়াজের পাতলা খোসা ফেলে দিলে প্রায় পুরোটাই ব্যবহার যোগ্য।
৯) পেঁয়াজ ব্যবহার না করে রসুনের ব্যবহারের দিকে একটু জোর দিতে হবে। গরম তেলে রসুন ও শুকনা মরিচের ফোঁড়ন দারুণ সুবাস তৈরি করে। ডাল কিংবা বিভিন্ন ধরনের ভাজি এভাবেই তৈরি করা যাবে।
১০) পেঁয়াজের বদলে স্প্রিং অনিয়ন কিংবা পেঁয়াজ কলি রান্নায় ব্যবহার করলে তরকারিতে পেঁয়াজের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে।
১১) সয়াবিন তেলে রান্না না করে অলিভ অয়েল ব্যবহারকরতে পারেন। এই তেল খাবারে স্বাদ বাড়াবে।
১২) পেঁয়াজের বদলে বেল পেপার কিংবা ক্যাপসিকাম ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাপসিকাম খাবারের স্বাদ বাড়াবে। ভাজি, মাছ বা মাংসের ঝোলে ক্যাপসিকামের ঝাঁঝালো স্বাদ ও গন্ধ কিন্তু দারুণ।
১৩) মাংস কিংবা মাছের ঝোল ঘন করতে পেঁয়াজের বদলে পরিমাণমতো পেঁপে বাটা ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাছ-মাংসের আঁশটে গন্ধ দূর হবে ও ঝোলও ঘন হবে।
১৪) রান্নায় টমেটো বাটার ব্যবহার খুব সহজেই যেকোন খাবারকে সুস্বাদু করে তুলবে। যেকোন ধরনের খাবার রান্নাতেই টমেটো মানিয়ে যায়।
আপনার মতামত লিখুন