নিহতদের মধ্যে পরিচয় মিলেছে ৬ জনের,পরিবারের কাছে হস্তান্তর

২৪ ঘন্টা চট্টগ্রাম স্পেশাল : চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহত সাতজনের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় মিলেছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনিক সকল কার্য সম্পাদন শেষে পরিচয় পাওয়া নিহত ছয় জনের লাশ তাদের পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ছয়জনের লাশ বুঝে নিয়েছে তাদের স্বজনরা। অজ্ঞাত হিসেবে একজনের লাশের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রশাসন।
পরিচয় পাওয়া নিহতদের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজারের রামু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক ও ফঁতেখারকুল ইউনিয়নের হাইটুপী গ্রামের নিহার বড়ুয়া প্রকাশ নিহার মাস্টারের মেয়ে অ্যানি বড়ুয়া। তিনি পটিয়ার ঊনাইনপুরা শাহগদী মার্কেট এলাকায় বাসিন্দা পলাশ বড়ুয়ার স্ত্রী এবং পটিয়ার মেহের আটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। অ্যানির মরদেহ তার কাকা মৃদুল বড়ুয়ার কাছে রবিবার বিকেলে হস্তান্তর করা হয়।
বিস্ফোরণের পর দেয়াল চাপায় নিহত হয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুবের খিল এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে নুরুল ইসলাম (৩০)। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রি ছিলেন। দুবছর আগেই বিয়ে করেন নুরুল ইসলাম। বিয়ের পর এক শিশু কণ্যা জন্ম হয়। স্ত্রী সাদিয়া সুলতানা ও শিশু কণ্যাকে নিয়ে নগরীর শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন বাস্তুুহারা কলোনিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন নিহত নুরুল ইসলাম। নিহত নুরুল ইসলামের স্ত্রী সাদিয়া বেগমকে মরদেহ বুঝিয়ে দেয়া হয়।
একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন সাতকানিয়া মৌলভির দোকান এলাকার বাসিন্দা আইনজীবি আতাউর রহমানের স্ত্রী জুলেখা খানম ফারজানা (৩০) ও তার বড় ছেলে আতিকুর রহমান শুভ (৭)।
নিহত স্ত্রী জুলেখা ও নিহত সন্তান আতিকুর রহমান এবং অপর সন্তান আসিফুর রহমান শ্রভ্রকে নিয়ে পাথরঘাটা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। নিহত বড় ছেলে আতিকুর রহমান সেন্ট প্লাসিডস স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ছোট ছেলে আসিফুর ব্রাদার ফ্লাভিয়ান স্কুলের নার্সারিতে পড়তেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নিহত স্ত্রী ও ছেলের মরদেহ বুঝে নেন আতিকুর রহমান।
চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের বড়ুয়া ভবনে গ্যাসলাইন দুর্ঘটনায় নিহতদের তালিকায় রয়েছে ভ্যানচালক মো. সেলিম। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার মহেশখালী। চট্টগ্রাম নগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় টাইলস মার্কেটে কাজ করতেন নিহত সেলিম। তার স্বজনরা বিকেলে হাসপাতাল মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করে বুঝে নেন।
এছাড়াও নিহতের তালিকায় রিক্সচালক আবদুস শুক্কুরের লাশ শনাক্ত করেছে তার পরিবার। নিহতের বাড়ি পটিয়ায়। রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টায় স্বজনরা এসে লাশ শনাক্ত করে লাশ বুঝে নিয়েছেন।
নিহত সাতজনের মধ্যে বাকি একজনের মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা প্রশাসন চালিয়ে যাচ্ছে জানালেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মোহাম্মদ আব্দুর রউফ।
এদিকে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অন্তত আরো ৯ জন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশংকাজনক বলে চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। এদের কয়েকজনের নাম ও পরিচয় জানা গেছে।
এদের মধ্যে চট্টগ্রামের পাথরঘাটার ব্রিক ফিল্ড রোডের যে ঘরটি থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয় ওই ঘরের বাসিন্দা সন্ধ্যা নাথ (৪০) ও তার বড় বোনের মেয়ে অর্পিতা নাথ। এদের মধ্যে দগ্ধ অর্পিতা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন। আর সন্ধ্যা ভর্তি আছেন ক্যাজুয়ালটি বিভাগে।
চমেকের অন্য ইউনিটে ভর্তি আছেন পাথরঘাটা সেইন্ট জোন্স গ্রামার স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা ডরিন তৃষা গোমেজ (২৩), ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধিন রয়েছেন রিকশা আরোহী ইউসুফ (৪০), ইসমাইল (৩০) ও আবদুল হামিদ (৪২)। বিস্ফোরণে ছিটকে আসা দেয়ালের অংশ পড়ে তারা হাতে-মাথায় ও শরীরের অন্যান্য অংশে আঘাত পেয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন