কৃষিজমি রক্ষার্থে অবিলম্বে কৃষি শুমারি করার আহ্বান সুজনের

কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ এবং অকৃষি খাতে জমির ব্যবহার রোধ করে কৃষিজমি রক্ষার্থে অবিলম্বে নগরীসহ বিভিন্ন এলাকায় কৃষি শুমারি করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীনের নিকট আহবান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
তিনি আজ সকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম এর উপ-পরিচালকের দফতরে এক মতবিনিময় সভায় উক্ত আহ্বান জানান।
এ সময় সুজন বলেন প্রতি বছর জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমিতে স্থাপনা নির্মাণ, অকৃষি খাতে জমির ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে বর্তমানে কৃষিজমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে কৃষিই হচ্ছে আমাদের প্রাণ। জলবায়ু পরিবর্তন, বিরূপ আবহাওয়া, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, প্রাকৃতিক সব বাঁধা পেরিয়ে কৃষিই বাংলাদেশের অন্যতম চালিকাশক্তি। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। তাই যে কোন মূল্যে কৃষিজমিকে বাচিঁয়ে রাখতে হবে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন কৃষি জমিকে কোন অবস্থাতেই আবাসিক কিংবা বানিজ্যিক খাতে রূপান্তরিত করা যাবে না। তাই কৃষিজমিকে রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকেই গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন বর্তমানে নগরীর প্রাকৃতিক শস্য ভান্ডার খ্যাত পতেঙ্গা থেকে কাট্টলী এবং বাকলিয়ার বিশাল কৃষি জমি ক্রমান্বয়ে নগরায়নের নামে গ্রাস করে ফেলা হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে নগরীতে আর কোন কৃষিজমিই অবশিষ্ট থাকবে না। কিন্তু এসব এলাকার উৎপাদিত রাসায়নিক সারবিহীন শাক সবজী নগরীর চাহিদা মিটিয়ে নগরীর বাহিরে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহও করা হচ্ছে। অথচ বিভিন্ন ব্যাক্তি, সরকারী কিংবা বেসরকারী স্থাপনার নামে এসব কৃষি জমি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। কৃষিজমি রক্ষার্থে কৃষিজমিতে স্থাপনা করার পূর্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে যেন অনাপত্তি সংগ্রহ করা হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করারও আহবান জানান তিনি। এছাড়া কৃষি জমিতে স্থাপনা করার পূর্বে অনাপত্তি ছাড়া কেউ যেন শিল্প স্থাপন করতে না পারে সেদিকে কঠোর দৃষ্টি রাখার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়, সিটি কর্পোরেশন, সিডিএসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতি তিনি বিনীত আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন বর্তমানে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে উপলব্দি করেছে তাই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলে এ রকম দুর্যোগ হতেই থাকবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন চট্টগ্রামের অধিকাংশ কৃষক পেঁয়াজ চাষ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। সেজন্য প্রয়োজন উন্নতমানের বীজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করতে পারে আগামী মৌসুমে পেঁয়াজ চট্টগ্রামের চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায়ও সরবরাহ করতে পারবে। বিশেষ করে রাঙ্গুনীয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশসহ বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে যদি কৃষিজমিতে গবেষণা করে বিভিন্ন মৌসুমী ফলমূল উৎপাদন করা যায় তাহলে আর সংকটের কোন সম্ভাবনাই থাকবে না। এছাড়া হালিশহরসহ যেসব জায়গায় রাসায়নিক বিষমুক্ত সবজী, ফলমূল উৎপাদন হয় সেসব কৃষকদেরও সহযোগীতা এবং প্রনোদনা দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানান সুজন।
এসব রাসায়নিক বিষমুক্ত সবজী যাতে নগরীতে বিপণন করতে পারে সেজন্য তিনি একটি স্থান নির্ধারন করার উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষন করেন। বিভিন্ন মৌসুমী ফলও যদি কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগে নগরীতে বিপণন করা যায় তাহলে নগরবাসী রাসায়নিক বিষমুক্ত ফল গ্রহণ করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। বর্তমানে ছাদ বাগানও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তাই ছাদ বাগানে কি কি সবজী বা ফলমূল রোপন করা যায় বছরব্যাপী তার প্রচারণা চালানোর জন্য উপ-পরিচালকের প্রতি আহবান জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দীন অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শ্রবণ করেন। তিনি নাগরিক উদ্যোগকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন কৃষি এবং কৃষকদের স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করার জন্য অত্র দফতরে আসা আমার জন্য এক প্রকার নতুন অভিজ্ঞতা। তিনি সংবাদপত্র এবং স্যোশাল মিডিয়া মারফত প্রাপ্ত নাগরিক উদ্যোগের প্রতিটি কর্মকান্ড জনহিতকর উল্লেখ করে বলেন নাগরিক সমাজ যদি এভাবে সচেতনতার সাথে এগিয়ে আসে তাহলে সমাজের অনেক অসঙ্গতি দূর হয়ে যাবে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে কৃষিজমিতে কোন প্রকার আবাসিক কিংবা বানিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না। ইতিমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। তারপরও ব্যাক্তি বিশেষ, সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা অনেকটা জোর করে কৃষিজমিতে আবাসিক এবং বানিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ করা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে আর এক সময় জনগন বস্তা ভরে টাকা নিয়ে গিয়ে থলে ভরেও বাজার করতে পারবে না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, কৃষককে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার পাশাপাশি রাসায়নিক সার, জ্বালানী, হাইব্রিড বীজ এবং আমদানি যোগ্য কীটনাশক সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভুর্তকি দিয়ে আমদানি করে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে যাচ্ছে। এছাড়া সরকারের বাস্তবমুখী কৃষিনীতি এবং সে অনুযায়ী বাজেট সহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ দেশকে কৃষি উন্নয়নের এক রোল মডেল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। কৃষিতে ভর্তুকি, সকল সার, বীজ ও সেচ ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়নের ফলে কৃষি পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন পরিবহন প্রভৃতি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নকে ত্বরানিত করেছে। তিনি নাগরিক উদ্যোগের নেতৃবৃন্দকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে কাজ করার উদাত্ত আহবান জানান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজনীতিবিদ হাজী মোঃ ইলিয়াছ, আব্দুর রহমান মিয়া, নাগরিক উদ্যোগের সদস্য সচিব হাজী মোঃ হোসেন, পংকজ চৌধুরী কংকন, শাহেদ বশর, সিরাজদৌল্ল্যা নিপু, হাসান মোঃ মুরাদ, নগর ছাত্রলীগ সভাপতি এম ইমরান আহমেদ ইমু, মোঃ ইদ্রিস, কামরুল হাসান রানা, হাসান মুরাদ, সালাউদ্দিন জিকু প্রমূখ।
আপনার মতামত লিখুন