ভারতের নতুন নাগরিকত্ব আইন মুসলিমদের প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ : জাতিসংঘ

ভারতে সদ্য পাস হওয়ায় নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইনকে মুসলিমদের প্রতি ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর। এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত সরকারকে আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, এই আইনের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই হলো বৈষম্য।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার এই বিল পাসের সময় বুধবার বলেছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে নির্যাতিত সংখ্যালঘু হিন্দুদের রক্ষা করা এই আইন সংশোধনের মূল উদ্দেশ্য।
এ ব্যাপারে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স বলেছেন, ভারতের নতুন নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন প্রকৃতিগতভাবে বৈষম্যমূলক হওয়ায় আমরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই আইন উল্লিখিত ছয় ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মতো মুসলিম শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলে না। আইনের দৃষ্টিতে সমতা রক্ষায় ভারত সরকারের যে সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, তার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক এটি।
জেরেমি লরেন্স বলেন, ওই আইনে ছয়টি ধর্মের মানুষের মত মুসলমান শরণার্থীদের জন্য একই রকম সুরক্ষার কথা বলা হয়নি। আর এর মধ্য দিয়ে সংবিধানে বর্ণিত সবার জন্য সমতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি।
“আমরা জানি যে এই আইনের বৈধতা ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং আমাদের আশা মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে ভারতের যে দায়বদ্ধতা রয়েছে আদালত তা বিবেচনায় নিয়ে নাগরিকত্ব আইনটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে,” যোগ করেন তিনি।
নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে সারা ভারত উত্তাল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতোমধ্যে আসাম এবং ত্রিপুরায় মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। উত্তরপূর্বের আর এক রাজ্য মেঘালয়ের পরিস্থিতিও ক্রমশ ঘোরাল হচ্ছে। গোটা পরিস্থিতিতে এমনিতেই অস্বস্তিতে মোদী সরকার। এর মধ্যে কেন্দ্রের অস্বস্তি বাড়াল জাতিসংঘ।
ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে ভারতের বাইরে এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চাইল যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন। সম্প্রতি ইউএস কমিশন ফর ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (USCIRF) এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘যদি বিলটি সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়ে যায়, তাহলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রের প্রধান নেতৃ্ত্বের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আনা উচিত আমেরিকার।’
মোদী সরকারের বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলের প্রতিবাদে আসামে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে ত্রিপুরায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই দুই রাজ্যে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিচ্ছে প্রশাসন। এ দিকে, সময় যত বাড়ছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছে বিক্ষোভের আগুন।
শুক্রবার মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে বিশাল বিক্ষোভ সংগঠিত হয়েছে। ক্ষিপ্ত জনতাকে পুলিশ লাঠিচার্জও করে। শিলং থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরে বিক্ষোভের মুখে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা। পাশাপাশি রাজধানী দিল্লিতেও এই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সংঘটিত হয়েছে। জামিয়া মিল্লিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এই বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন।
পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকেও এদিন সকাল থেকে রেল অবরোধ-বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গাতেও আরপিএফ কর্মীদের মারধর করা, কেবিনম্যানকে পেটানো থেকে আগুনও লাগানো হয় স্টেশনে। ডায়মন্ড হারবার শাখার বাসুলডাঙাতেও এবং বারুইপুর-ডায়মন্ড হারবার শাখায় রেল অবরোধ করেন এই আইনের বিরোধীরা।
আপনার মতামত লিখুন