খুঁজুন
সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিজিবি-কে বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার:প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৫:৩৬ অপরাহ্ণ
বিজিবি-কে বিশ্বমানের বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার:প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিজিবিকে বিশ্বমানের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ভিশন ২০৪১’পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার এ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিজিবি পুনর্গঠনের আওতায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে একটি বিশ্বমানের আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বিজিবি’র সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য এই বাহিনীর সদস্যদের দেশপ্রেম এবং দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং চেইন অব কমান্ড মেনে চলার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশাকরি যে, আপনারা সব সময় দেশপ্রেম,সততা এবং দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সব সময় এই বাহিনীর সুনাম ও মর্যাদা সমুন্বত রাখবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে বিজিবি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

শৃঙ্খলা এবং চেইন অব কমান্ডকে একটি বাহিনীর অন্যতম চালিকা শক্তি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আবেদন থাকবে উর্ধ্বতন কতৃর্পক্ষের কমান্ড মেনে চলবেন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখবেন। আর আপনাদের কোন সমস্যা হলে সেটা দেখার জন্য আমরাতো আছিই।’
‘কাজেই আপনারা সবসময় সততার সাথে নিষ্ঠার সাথে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবেন। যেন দেশ আজকে অর্থনৈতিকভাবে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে,’যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘জাতির পিতার হাতে গড়া এই প্রতিষ্ঠান। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পার হতে হয়েছে। আগামী দিনে এই সীমান্তরক্ষী বাহিনী সারাবিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মর্যাদা অর্জন করবে-সে বিশ্বাস আমার আছে।’

এরআগে, বিজিবি সদস্যরা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী। একটি সুসজ্জিত খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শনকালে বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম এবং প্যারেড কমান্ডার কর্নেল এ এম এম খায়রুল কবির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

এছাড়া মটর শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় এবং বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুল রউফ পাবলিক কলেজের প্রায় ৬শ’ শিক্ষার্থী ‘স্বাধীনতা ও উন্নয়নের আগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’শীর্ষক ডিসপ্লে প্রদর্শন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি দিবস উপলক্ষে বীরত্বপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিডিআর কর্মকর্তাদের মাঝে বর্ডার গার্ড পদক-২০১৯, রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক-২০১৯, বর্ডার গার্ড পদক সেবা-২০১৯ এবং রাষ্ট্রপতি বর্ডার গার্ড পদক সেবা-২০১৯ বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজে অংশ গ্রহণকারী প্যারেড কমান্ডার এবং অন্যান্য কন্টিনজেন্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং কূটনৈতিক কোরের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরের বীরউত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন এবং বিজিবি মহাপরিচালক তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর-উত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে বিজিবি সদস্যদের বিশেষ দরবারে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা শেখ মুজিব এদেশের গরিব-দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্যই এই বাংলাদেশ সুখী ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তারপরেই থেমে যায় আমাদের অগ্রযাত্রা।’

তিনি উল্লেখ করেন, আবার ২১ বছর পর ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই কেবল দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।

‘আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিশ্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্রের হার ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মানুষের আয় মাথাপিছু বেড়েছে এবং সকলের বেতন-ভাতা এবং সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং আমাদের আর কারো কাছে ভিক্ষে চেয়ে চলতে হয় না।’

অনেক চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করেই আজকের এই অর্জন-এমন অভিমত ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, এটা আমাদের ধরে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মাথা উঁচু করে চলবো এবং বিশ্বে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান আমরা করে নিতে সক্ষম হব।’

তিনি বিজিবি সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনাদের কাছে এটাই আমরা চাই- আপনারা এদেশকে ভালবেসে সেদেশের মানুষের প্রতি কর্তব্য পালন করবেন।’

‘দেশ যদি উন্নত হয় তাহলে আপনাদের পরিবার-পরিজনরা এবং দেশের মানুষই উন্নত হবে। সে কথাটা সব সময় মনে রাখবেন,’ বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘটিত বিদ্রোহ ও হত্যাকা- বিজিবি’র (তৎকালিন বিডিআর) ইতিহাসের একটি কালো অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন। ঐ ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন।

প্রধানমন্ত্রী ঐ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন,‘বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালকসহ যে সকল অফিসার, অন্যান্য সদস্য ও বেসামরিক ব্যক্তি শহিদ হয়েছেন, আমি তাঁদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।’

তিনি বলেন,‘বিডিআর বিদ্রোহের সঙ্গে সম্পৃক্ত উচ্ছৃঙ্খল ও বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মাধ্যমে এ বাহিনী এখন সম্পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত হয়েছে।’

জাতির পিতা দেশের স্বাধীনতা দিয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ায় বাংলার জনগণকে তাঁর কাঙ্খিত অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করাই তাঁর এবং আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলেও প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেলে দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে তোলার সুযোগ না পাওয়ায় এটা তাঁর দায়িত্ব মনে করে যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে এই কাজটি এগিয়ে নেয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে সম্পাদিত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির আওতায় ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত সুরক্ষা এবং বিজিবির আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগীকরনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য সীমান্তের নিরাপত্তা বৃদ্ধি, দুর্গম এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলায় প্রথম পর্যায়ে ৩১৭ কিমি সীমান্তবর্তী রিং সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। ভারত ও মায়ানমার সীমান্তে ব্যাটালিয়ন সৃজনের মাধ্যমে ৫৩৯ কি:মি: অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪৪২ কি. মি. সীমান্ত নজরদারীর আওতায় আনা হয়েছে।

জানুয়ারি মাসে অত্যাধুনিক ২টি হেলিকপ্টার বিজিবিতে যুক্ত হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩২৮ কি.মি. সীমান্তে স্মার্ট ডিজিটাল সার্ভিল্যান্স এন্ড ট্যাকটিক্যাল রেসপন্স সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আধুনিক, যুগোপযোগী ও কার্যকর ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছে। ১২টি আর্মাড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (এপিসি) এবং ১০টি রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল ক্রয় করা হচ্ছে। সীমান্তের স্পর্শকাতর আইসিপি/এলসিপি সমূহে ভেহিক্যাল এক্স-রে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন এবং ‘বিজিবি ডগ স্কোয়াড’ গঠন করা হয়েছে।

এছাড়াও তল্লাশী কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ৬টি মেকানাইজড ইনস্পেকশন সিস্টেম ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্ত ডাটা সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিটাল মোবাইল রেডিও (ডিএমআর) নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে সদর দপ্তর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত বিওপি’র সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ভূমিকম্পের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিজিবি যশোর অঞ্চলে ডিজেস্টার রিকভারি সাইট নির্মাণ করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজিবি সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সাতকানিয়ার ‘বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ’ এর পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, বিজিবি সদস্যদের জন্য নতুন র‌্যাংক ব্যাজ প্রবর্তন, জেসিওদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি,বিজিবি’র সকল স্তরে বেতন-ভাতার বৈষম্য দূর, যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভাগীয় অফিসার পদে পদোন্নতি এবং সীমান্ত ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।

এছাড়া ২ মাসের বাৎসরিক ছুটি ও অগ্রিম বেতন প্রদান, পারিবারিক রেশন, ৩ বছরের নীচের সন্তানদের পূর্ণ স্কেল রেশন প্রদানসহ বিজিবি সদস্যের প্রতিবন্ধী সন্তানদের অবসরের পূর্ব পর্যন্ত নগদ মূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজিবিতে বিদ্যমান ৫টি হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ২০৫ জন কর্মচারীর দেশে-বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিজিবি স্বাস্থ্য সহায়তা প্রকল্প তহবিল থেকে ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার বেশি অনুদান হিসেবে দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বিজিবি তথা তৎকালিন বিডিআর সদস্যদের আত্মত্যাগের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে তৎকালীন ইপিআর-এর বেতারকর্মীরা এই পিলখানা থেকেই বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা সমগ্র দেশে ওয়্যারলেস যোগে প্রচার করায় ইপিআরের (তৎকালিন) সুবেদার মেজর শওকত আলীকে পাক হানাদার বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করে।’

অনুষ্ঠানে ১৯৭৪ সালে বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় বঙ্গবন্ধুর প্রদত্ত ভাষণ বাজিয়ে শোনানো হয়। সেই ভাষণের আলোকে এই বাংলার মাটি থেকে চোরাকারবারী, দুর্নীতি এবং সমাজ বিরোধীদের উৎখাতে এই বাহিনীর সদস্যদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর উদাত্ত আহবানের সঙ্গেও একাত্মতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসাথে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার পুনর্বাসনে বিজিবি’র ভূমিকার প্রশংসা করেন।

Feb2

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা পুনরুদ্ধার করল ভারত

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা পুনরুদ্ধার করল ভারত

আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগের নাম ছিল আইসিসি নকআউট বিশ্বকাপ। ২০০০ সালে নকআউট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল নিউজিল্যান্ড। দুই যুগ পর সেই হারের প্রতিশোধ নিলো ভারত। কিউইদের ৪ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রোহিত শর্মার দল। তাতে সর্বশেষ আসরে পাকিস্তানের কাছে হারানো শিরোপা এবার পুনরুদ্ধার করল তারা।

দুবাইয়ে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৩ রান করেছেন ড্যারিল মিচেল। তাছাড়া ফিফটি পেয়েছেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। ভারতের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেছেন বরুণ চক্রবর্তী ও কুলদীপ যাদব। জবাবে খেলতে নেমে ৪৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান করেছেন রোহিত।

২৫২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিলেন। বিশেষ করে রোহিত, ব্যাট হাতে তিনি রীতিমতো ঝড় তোলেন। বড় ম্যাচে এসে নিজের সেরাটা দেখালেন ভারত অধিনায়ক।

দুই ওপেনারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে শুরুর পাওয়ার প্লেতে বিনা উইকেটে ৬৪ রান তোলে ভারত। ৪১ বলে ব্যক্তিগত ফিফটি করেন রোহিত। তার তুলনায় কিছুটা রয়ে-সয়ে খেলেছেন গিল। ৫০ বলে ৩১ রান করে এই ওপেনার ফিরলে ভাঙে ১০৫ রানে উদ্বোধনী জুটি।

ওপেনারদের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েও সুবিধা করতে পারেননি তিনে নামা বিরাট কোহলি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটার ২ বলে করেছেন ১ রান। কোহলি ফেরার পর রোহিতও আর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও থেমেছেন ৭৬ রানে।

১৮ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট তুলে তখন কিছুটা হলেও ম্যাচে ফেরে কিউইরা। তবে চতুর্থ উইকেট জুটিতে শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল আবারো নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেয়। ৬২ বলে ৪৮ রান করে আইয়ার ফিরলে ভাঙে ৬১ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি।

এরপর অক্ষর, হার্দিক পান্ডিয়া শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তাদের বিদায়ে কিছুটা হলেও ভারতের ওপর চাপ পড়ে। তবে সেই চাপ শক্ত হাতে সামাল দেন লোকেশ রাহুল। এক প্রান্ত আগলে রেখে হিসেব-নিকেষ করে শট খেলেছেন তিনি। দলের প্রয়োজন মতো আক্রমণাত্মক হয়েছে তো আবার প্রয়োজনে দেখে-শুনে খেলেছেন। তার অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংসে ৬ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ভারত।

এর আগে আগে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনারের ব্যাটে ভালো শুরু পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং বেশ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। বিশেষ করে রাচিন। এই ইনফর্ম ব্যাটার পেসারদের বেশ স্বাছন্দ্যেই খেলছিলেন। যদিও সপ্তম ওভারে মোহাম্মদ শামিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েও জীবন পেয়েছিলেন।

তবে ভারত স্পিন আক্রমণে যাওয়ার পর বেশ ভুগেছেন রাচিন। অষ্টম ওভারের প্রথম বলে বরুণকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন রাচিন। এবারও বল হাতে পেয়ে জমাতে পারেননি ফিল্ডার। তাতে আরো একবার জীবন পান এই ওপেনার।

রাচিন জীবন পেলেও একই ওভারের পঞ্চম বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন উইল ইয়াং। এই ওপেনার সাজঘরে ফেরার আগে ২৩ বলে করেছেন ১৫ রান।

ফাইনালের মতো বড় ম্যাচে দুইবার জীবন পেয়েও বেশি দূর এগোতে পারলেন না রাচিন। এগারোতম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই রাচিনকে ফিরিয়েছেন কুলদীপ যাদব। এই চায়নাম্যানের গুগলিতে বোকা বনে যান রাচিন। বোল্ড হওয়ার আগে ২৯ বলে করেছেন ৩৭ রান।

বড় ম্যাচে বেশিরভাগ সময়ই রান পান উইলিয়ামসন। তবে আজ সেই রীতি ভাঙলেন তিনি নিজেই। বাজে এক শটে রীতিমতো আত্মহত্যা করেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার! রাচিন ফেরার পর বড় দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। তবে আজ আর পারলেন না। ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কুলদীপকে ফ্লিক করতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। তার আগে ১৪ বলে করেছেন ১১ রান।

এরপর টম ল্যাথামও উইকেটে থিতু হয়ে ফিরেছেন। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। ৩০ বলে করেছেন ১৪ রান। ১০৮ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ফিলিপসকে সঙ্গে নিয়ে দলকে টেনে তোলেন ড্যারিল মিচেল। ভালো শুরু পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি ফিলিপস। ৫২ বলে করেছেন ৩৪ রান।

বাকি ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার মাঝে এক প্রান্ত আগলে রেখেছিলেন মিচেল। দেখে-শুনে খেলায় প্রচুর ডট বল খেলেছেন। তাই ব্যক্তিগত ফিফটির পর গিয়ার পরিবর্তন করেন। তাতেই বাড়ে বিপদ। ৬৩ রান করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।

মিচেল ফিরলে দলের হাল ধরেন ব্রেসওয়েল। তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়েই লড়াই করার পুঁজি পায় দল। ৪০ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করেছেন এই ব্যাটার।

মাগুরার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫, ১:০১ অপরাহ্ণ
মাগুরার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ

মাগুরায় বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটির সব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

ওই শিশুর ছবি সরিয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসির) দুপুর সোয়া ১২টার মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে তথ্য জানানোর জন্য বলেছেন আদালত।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করার পর রোববার (৯ মার্চ) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদেশের বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান।

তিনি বলেন, মাগুরাসহ সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায়, আজ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করার পর, মাগুরার সেই শিশু সমস্ত ছবি ইউটিউব, ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে, আবেদনের পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন বলে আদালত জানিয়েছেন।

এর আগে, শনিবার ঢাকা মেডিকেল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) নেওয়া হয় শিশুটিকে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় মামলা করেছেন শিশুটির মা। মামলায় শিশুটির বোনের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে আসামি করা হয়েছে। তারা আগে থেকেই পুলিশের হেফাজতে ছিলেন। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেন, মেয়ের স্বামীর সহায়তায় তার বাবা (শ্বশুর) শিশুটিকে ধর্ষণ করেন। বিষয়টি মেয়ের শাশুড়ি ও ভাশুর জানতেন। তারা ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যাচেষ্টা চালান।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে ছিল নারীরা: ড. ইউনূস

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫, ৪:৩০ অপরাহ্ণ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে ছিল নারীরা: ড. ইউনূস

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতা মিলে যে অসাধ্য সাধন করেছে তার সম্মুখসারিতে ছিল এ দেশের নারীরা। ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রাণঘাতি অস্ত্রের সামনে হিমালয়ের মতো দাঁড়িয়েছিল আমাদের মেয়েরা।

তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে। আমাদেরকে এখন ততটাই সতর্ক থাকতে হবে যেমনটা আমরা যুদ্ধের মতো পরিস্থিতির মধ্যে ছিলাম। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা রক্ষায় সর্বোচ্চ সজাগ থাকুন। নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক ঐক্য গড়ে তুলুন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ান। একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করুন।

৮ মার্চ (শনিবার) রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে থাকলেও আমাদের সমাজে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা পিছিয়ে আছে। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এজন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান। দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের থাকার হোস্টেল, ডে-কেয়ার সেন্টার সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকার নিচ্ছে। আরও কী কী করা যেতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা চলছে।

ড. ইউনূস বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা বুঝতে পারেন না কোথায় অভিযোগ জানাবেন। নারীরা যেন তাদের অভিযোগ জানাতে পারেন সেজন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করার উদ্যোগ নিয়েছি। যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও আমরা হাতে নিয়েছি। আমরা একটি নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন করেছি, তারাও তাদের সুপারিশগুলো দেবে।