সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ আত্মনিয়োগ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

২৪ ঘন্টা ডট নিউজ।চট্টগ্রাম ডেস্ক : আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা কাজে লাগিয়ে নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে মিডশিপম্যান ২০১৭/এ ব্যাচ ও ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৯/বি ব্যাচের নবীন অফিসারদের শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামরিক পরিমণ্ডল ছাড়াও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আবাসন প্রকল্প এবং ব্লু -ইকোনমিতে নৌ বাহিনীর গুরুত্ব তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে উপকুলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনীর সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও এ বাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্র অপার সম্পদের যে উৎস রয়েছে সেগুলো সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রয়োজনে একটি আধুনিক ও শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। এ লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় দুটো পেট্রোল ক্রাফট নিয়ে নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নৌ ঘাটিগুলোকে কমিশন প্রদান করেন। এছাড়া বন্দর এলাকায় পাকিস্থান সেনাবাহিনী যে সব মাইন পুতে রেখেছিল সেগুলো অপসারণ করে এগুলো ব্যবহার উপযোগী করেন।
তার আলোকে বর্তমান নৌবাহিনীকে আরো আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চালু হয়েছে উন্নত প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্পন্ন আন্তর্জাতিক মানের সুবিশাল বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চীন থেকে দুটি ফ্রিগেট শিগগিরই নৌবহরে যুক্ত হবে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য সংখ্যক করভেট, মাইনহান্টার, ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ভেসেল ও সেইলিং শিপসহ বিভিন্ন জাহাজ ক্রয় ও নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নেভাল এভিয়েশনের জন্য মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট, অ্যান্টি সাবমেরিন হেলিকপ্টার ও এমআরএমপিএ (লংরেঞ্জ মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট) ক্রয়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
এর আগে নৌবাহিনীর শীতকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শনে অংশ নিতে রোববার (২২ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ১১টার দিকে পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে নৌ বাহিনী প্রধানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা তাকে বরণ করে নেন। এসময় তিনি নবীন নৌ কর্মকর্তাদের কুচকাওয়াজ পরিদর্শনের পাশাপাশি প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন।
পরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল বীর নৌসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী তার প্রধান অথিতির বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল এই বাংলাকে সত্যিকার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে জাতির পিতার সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বাহিনী অপারেশন জ্যাকপট অভিযান পরিচালনা করে। দেশ-মাতৃকার সেবায় এই বাহিনীর অবদান অনুসরণীয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সর্ববৃহৎ ঘাঁটি ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’ এবং ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭/এ ব্যাচের ৬১ জন মিডশীপ ম্যান এবং ২০১৯/বি ব্যাচের ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ নবীন অফিসার কমিশন লাভ করেছেন। এর মধ্যে ২ জন মালদ্বীপের কর্মকর্তা এবং ৭ জন মহিলা রয়েছেন।
সকল বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশীপম্যান হিসেবে সোর্ড অব অনার লাভ করেন ২০১৭/এ ব্যাচের রাইয়ান রহমান। প্রশিক্ষণে ২য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন সাইদিস সাকলাইন মিরান এবং ২০১৯/বি ব্যাচ হতে সাব লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। সদ্য কমিশনপ্রাপ্তদের হাতে তাদের প্রাপ্ত পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী ও সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, এমপি এম এ লতিফ, সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, সেনা ও বিমানবাহিনীর প্রধান, নৌ সদর দপ্তরের পিএসও, সেনা ও বিমানবাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়কসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং দেশি-বিদেশি কূটনীতিক ও শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের কমিশনপ্রাপ্ত ক্যাডেটদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন