সাকিব ম্যাজিকে বাংলাদেশের ইংল্যান্ড বধ

সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে এসে অবশেষে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ৫০ রানে হারিয়ে রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দলের জয়ে একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান। ব্যাটিংটা ভালো-মন্দের মিশেলে হয়েছে টাইগারদের। ফিফটি হাঁকিয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসান। শেষদিকে ৭১ বলে ৭৫ রানের ঝড়ো এক ইনিংস খেলেন সাকিব। শেষমেশ ২৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
২৪৭ রানের মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করছিল ইংল্যান্ড। ওপেনার ফিল সল্টই বেশি মারমুখি ছিলেন। আরেক ওপেনার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জেসন রয় আগাচ্ছিলেন কিছুটা ধীরগতিতে। দুজনের জুটি পার করে ফেলে ৫০ রান। সল্টকে ফিরিয়ে দিয়ে ইংলিশদেরকে প্রথম আঘাতটা দেন সাকিব। ২৫ বলে ৩৫ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস খেলে দলের দলের ৫৪ রানের মাথায় আউট হয়ে যান সল্ট।
সল্টের আউটের পর ইংলিশদের রানের গতি কিছুটা কমে যায়। পরের ওভারেই ডেভিড মালানকে আউট করে দেন সিরিজে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এবাদত হোসেন চৌধুরী। রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরের পথ ধরেন মালান।
পরের ওভারে আরও একটি উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এবার আউট হন জেসন রয়, ফিরিয়েছেন সেই সাকিব। টানা ৩ ওভারে ইংল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচটা বেশ জমিয়ে তোলে বাংলাদেশ।
সেই চাপ থেকে ইংলিশদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন স্যাম কারান এবং জেমস ভিন্স। দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে রান তুলছিলেন তবে কিছুটা ধীরগতিতে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৯ রান যোগ করেন ভিন্স এবং কারান। ভিন্স কিছুটা সাবলীল থাকলেও অনেকটাই নড়বড়ে ছিলেন কারান। দলের ১০৪ রানের মাথায় কারানকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। এর কিছুক্ষণ ৪৪ বলে ৩৮ রান করে আউট হন ভিন্স, উইকেটশিকারী এবারও সেই সাকিব। পরের ওভারেই মঈন আলীকে ফিরিয়ে দেন এবাদত। ১৩০ রানের মধ্যে হুট করেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। ইংলিশদের একের পর এক উইকেট তুলে ম্যাচটাকে আবারও জমিয়ে তোলেন টাইগার বোলাররা।
এরপর ক্রিস ওকসকে সাথে নিয়ে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন অধিনায়ক জস বাটলার। বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন বাটলার। তবে ২৪ বলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে দলের ১৫৮ রানের মাথায় ইংলিশদের বড় ভরসা বাটলারও আউট হয়ে যান। বাটলারকে ফিরিয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। আর তাতেই যেন ম্যাচ হেলে পড়তে শুরু করে বাংলাদেশের দিকে।
পরে ইংল্যান্ডের বাকি ব্যাটাররা মিলে চেষ্টা চালিয়ে গেছেন ম্যাচ বের করার। তবে লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বেশ তাড়াতাড়িই বাকি উইকেটগুলো হারিয়ে ১৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় ইংল্যান্ড। সাদা বলের ক্রিকেটের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ৫০ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান। মাত্র ৩৫ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন এবাদত এবং তাইজুল। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মুস্তাফিজুর রহমান। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন বোলাররা। আর বোলারদের এমন দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলে বেশ সহজেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় টাইগাররা।
এই জয়ের ফলে সিরিজে প্রথম জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। প্রথম দুই ম্যাচ জেতার কারণে ওয়ানডে সিরিজটা ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে ইংল্যান্ড। ওয়ানডে শেষে এবার টি-টোয়েন্টির লড়াইয়ে মাঠে নামবে দুই দল। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগামী ৯ মার্চ, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ম্যাচ শুরু হবে বেলা ৩টায়।
আপনার মতামত লিখুন